এসআইআর আতঙ্কে নথি তৈরির চেষ্টা, সীমান্তবর্তী গ্রামে ভিড় বাড়ছে অপরিচিতদের
বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: সীমান্তবর্তী গ্রামে অপরিচিতদের আনাগোনা বাড়ছে। সূতির নুরপুর, শ্যামপুর, ইসলামপুর, হাসানপুর, নিমতিতার মতো সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে অপরিচিতদের ভিড় বাড়ছে। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি বলে অনুমান পুলিস ও গোয়েন্দাদের। যারা নদী পেরিয়ে অবৈধভাবে এপারে এসে ভারতীয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এপারে ঠাঁই নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ভোটার, আধার ও প্যান কার্ড বানিয়ে ফেলছে। ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত কাগজ তৈরি করে ফেলায় পুলিসের তরফে তাদের চিহ্নিত করতে সমস্যা হচ্ছে। স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বিতর্কের মধ্যেই এই তথ্য বেশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। জঙ্গিপুর পুলিস জেলার অন্তর্গত সূতি ও ফরাক্কা থানা এলাকায় গত এক সপ্তাহে তিন বাংলাদেশি সহ চারজন সাহায্যকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। তাদের জেরা করে আরও কয়েকজন বাংলাদেশিকে পাকড়াও করার চেষ্টা চলছে।
জঙ্গিপুর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, আমরা সীমান্তবর্তী গ্রামে নজরদারি বাড়িয়েছি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আমরা সূতি ও ফরাক্কা থেকে তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের সাহায্যকারী এপারের আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে আরও তল্লাশি চলছে। কীভাবে তারা জাল নথি বানাচ্ছে, সেগুলিও আমরা খতিয়ে দেখছি।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা সূতির ইসলামপুরে ঘাঁটি গেড়েছিল। তাদের মধ্যে থেকে মহম্মদ মামুনার রাশেদ ও মোজাম্মেল হককে পুলিস গত বুধবার গ্রেপ্তার করে। মামুনার সূতিতে এসে নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছিল ফিতু শেখ ওরফে আলম। তার বাড়ি বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অন্তর্গত হাসানপুর ক্যাম্পপাড়ায়। মোজাম্মেলের বাড়ি ওই থানারই জগন্নাথপুর এলাকায়। তারা দু’জনেই ইসলামপুর গ্রামের ঠিকানায় সমস্ত ভারতীয় নথিপত্র বানিয়েছিল।
এদিকে পুলিস ফরাক্কায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের জিগড়ি মোড়ের কাছে ওয়াসিম আক্রম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার রাতে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির জন্য তাকে প্রথমে আটক করা হয়। পুলিসি জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, বাংলাদেশ থেকে জল-সীমান্ত পেরিয়ে সে এদেশে এসেছে। তার বাড়ি বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার উজিরপুর তালপট্টি এলাকায়। সে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে নিশিন্দাপার মহাদেবনগরে উঠেছিল। তাকে সাহায্যকারী দুই স্থানীয় বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন ও মিস্টার শেখকেও পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। এরা সকলেই চোরাকারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিস।
ইসলামপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, বছর পাঁচেক আগে এখানে যতজন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটার ছিলেন, সেই তুলনায় এখন তার সংখ্যা অনেকগুণ বেড়েছে। এরা সকলে কিন্তু নতুন ভোটার নন। মাঝবয়সি ভোটারও বেড়েছে। তাহলে এরা কারা? এই গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে থাকি। চারপাশে অপরিচিত লোকজন জাঁকিয়ে বসেছে। ওদের নিয়ে বেশি কিছু বলতে গেলে আমাদেরই সমস্যা বাড়বে।
সীমান্ত লাগোয়া নুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য শাহাবুদ্দিন শেখ বলেন, এখানকার গ্রামগুলির পাশেই নদী রয়েছে। নদী পার হলেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে লোকজন এসে অনেকেই গোপনে থাকছে। অনেকেই আত্মীয়বাড়িতে এসেছে বলে থাকতে দিচ্ছে। তারপর ধীরে ধীরে সমস্ত ডকুমেন্টস বানিয়ে ফেলছে। ফলে পরবর্তীতে তাদের চিহ্নিত করতে আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে।