• দলের সঙ্গীন অবস্থায় দুশ্চিন্তায় বিজেপি নেতারাই, বীরভূম সাংগঠনিক জেলার প্রায় ৫০০ বুথে নেই কোনও কমিটি
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্য দখলের দিবাস্বপ্ন দেখলেও বীরভূম সাংগঠনিক জেলার পাঁচশোর কাছাকাছি বুথে তাদের কোনও কমিটিই নেই। সংগঠনের এই হাঁড়ির হালে জেলায় ভালো ফল করা নিয়ে সংশয় গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। জেলার কোর কমিটির সদস্য তথা সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, ওদের সংশয় থাকলেও আমাদের কোনও সংশয় নেই যে, ফের বেশি ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হবেন। নিজেদের ঢাক পেটানো আর বিরোধীদের নিয়ে অপ্রচারেই ওরা গোটা দেশে এগিয়ে। বাকি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে। 

    বিজেপি সূত্রের খবর, বীরভূম সাংগঠনিক জেলার অধীনে রয়েছে ১৯৪৮টি বুথ। তারমধ্যে প্রায় পাঁচশো বুথে তাদের কোনও কমিটি নেই। কোথাও বুথ কমিটি থাকলেও তা নিস্ক্রিয়। কোথাও অবার বুথ কমিটির সদস্য সংখ্যা তিন-চার। আবার কোথাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে খুশি করতে কাগজকলমে বুথ কমিটি দেখানো হলেও বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্ব নেই বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় ভালো ফল নিয়ে সংশয়ে জেলার নেতারা। 

    গত লোকসভা নির্বাচনের সময় কেন্দ্রের জনমুখী প্রকল্পগুলি লিফলেট আকারে প্রচার ও বাড়ি বাড়ি মোদিজির প্রণাম জানিয়ে জনসংযোগ করেছিল বিজেপি। দেওয়াল লিখন ও বুথ এলাকায় প্রতিদিন প্রচারের টার্গেট নিয়েছিল তারা। সর্বাধিক ১৬৫০টি বুথে প্রচারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কারণ, বাকিগুলিতে তাঁদের কোনও কমিটিই নেই। কিন্তু তারপর এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও সংগঠনের তেমন কোনও উন্নতি হয়নি বলে দাবি বিজেপির জেলা কমিটির প্রবীণ সদস্য মুকুল মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, বর্তমানে জেলা কমিটিতে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন তাঁদের বুথ বা সংগঠন সম্পর্কে কোনও আইডিয়া রয়েছে কি না সন্দেহ। বুথ লেভেলের মানুষদের সঙ্গে ওঠাবসাই হল সংগঠন।  বর্তমানে জেলার নেতাদের সঙ্গে বুথস্তরের কোনও সমন্বয় নেই। এজন্যই এই অবস্থা। যাদের নেতৃত্বে ২০২১ সাল থেকে লড়াই করে আসছি, তারাই ফের নতুন কমিটিতে এসেছেন। ফলে ২০২৬ সালেও ২০২১ সালেরই পুনরাবৃত্তি দেখতে হবে। এই পাঁচবছরে সাংগঠনিক শক্তি এক শতাংশও বাড়েনি। পার্টির নিয়মে এখানে সংগঠন চলছে না। 

    অন্যদিকে প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বর্তমানে জেলা কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য রামকৃষ্ণ রায় বলেন, যাঁরা এখন নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁদের চিন্তাভাবনা থাকা দরকার যে, কীভাবে বাকি বুথগুলিতেও কমিটি গঠন করা যায়। আমাকে আমন্ত্রিত সদস্য করেছে, কিন্তু সাংগঠনিক কাজে ডাকে না। শুধু অনুষ্ঠান হলে ডাকে। এর বেশি কিছু বলছি না। 

    যদিও বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মণ্ডল বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরল অ্যাপের মাধ্যমে বুথ ভেরিফাইয়ের চলছে। জল মেশানো যাতে না হয় সেজন্য বুথ কমিটির সদস্যদের ভোটার কার্ড, ছবি অ্যাপে আপলোড করতে হচ্ছে। শুধু নামেই, নাকি বাস্তবে বুথ কমিটি আছে সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখবে। এখনও পর্যন্ত ১৪৫৭টি বুথে ভেরিফাইয়ের কাজ হয়েছে। আমাদের ভুলে হোক বা তৃণমূলের তোষণনীতির ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় কার্যকর্তার অভাব রয়েছে। যার জন্য বুথ গঠন করা যায়নি। যদিও কিছু এলাকায় সংখ্যালঘু কার্যকর্তাও আছে। কিন্তু তাঁরা সামাজিক ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। ফলে আমরাও সেগুলি গোপন রেখেছি। 
  • Link to this news (বর্তমান)