• অযোগ্য তালিকায় দু’জন স্কুল শিক্ষক, সঙ্কটে পাড়ুইয়ের হাঁসড়া উচ্চ বিদ্যালয়
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বোলপুর:‌ অযোগ্যদের তালিকায় ফের দুই শিক্ষকের নাম থাকায় তীব্র শিক্ষক সঙ্কটে পাড়ুই থানার হাঁসড়া উচ্চ বিদ্যালয়। পরপর শিক্ষক ছাঁটাই হওয়ায় পঠন-পাঠন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ওই স্কুলে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৬ হাজারের তালিকায় থাকা দু’জন শিক্ষাকর্মী অমিতকুমার দাস ও মৃত্যুঞ্জয় পাঠককে ইতিমধ্যেই চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতিহাসের শিক্ষক অভিষেক দত্ত ও গণিতের শিক্ষক রাহুলকুমার পালের বেতন গত এপ্রিল মাস থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নতুন প্রকাশিত অযোগ্যদের তালিকায় তাদের নামও রয়েছে। তাদের কার্যত পাঠদানের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে, স্কুলে সামগ্রিক পঠন-পাঠনে তীব্র সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।

    ১৯৬০ সালে স্থাপিত হয় এই স্কুল। বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৭৫০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। এখানে বিজ্ঞান ও কলা দু’টি বিভাগই রয়েছে। নিয়মানুযায়ী যেখানে ৩১জন শিক্ষকের থাকার কথা, সেখানে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ২২জন। ইতিমধ্যেই দু’জন শিক্ষক বাদ পড়ায় পড়ুয়াদের শিক্ষা কার্যত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অংকের শিক্ষক না থাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারণ রাহুলকুমারই ছিলেন স্কুলের একমাত্র অঙ্কের শিক্ষক। তিনি না থাকায় অঙ্কের ক্লাস কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

    স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্রবিজয় মুখোপাধ্যায় বলেন, নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী না থাকার কারণে শিক্ষকদের অতিরিক্ত কাজের পাশাপাশি স্কুলের নথিপত্র ও প্রশাসনিক কাজও শিক্ষকদের উপর এসে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষক সঙ্কটের প্রভাব শুধু পাঠদানে সীমাবদ্ধ নেই। বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে। শিক্ষক সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরীক্ষার সময় পর্যাপ্ত তদারকি করা সম্ভব হবে না। এই বছর পরীক্ষাকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষকে কার্যত হিমশিম খেতে হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও শিক্ষক বাদ পড়লে স্কুলটি বড়সড় সমস্যায় পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন।

    তাৎপর্যপূর্ণভাবে, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রূপ মণ্ডল এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক নূর ওয়াসিম নাওয়াজ আপাতত আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। এর ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষের ধারণা, ডিসেম্বরের পরে এই দুই শিক্ষকও বাদ পড়লে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। বিশেষত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানেরও একমাত্র শিক্ষককে যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি স্কুলে পড়ানোই সম্ভব হবে না বলে কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমনকী, বিষয়টি পুরোপুরি উঠে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

    শিক্ষক কমে যাওয়ায় শুধু দৈনন্দিন পাঠদানে নয়, বরং পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও পড়ুয়ারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মোটের উপর বিদ্যালয়টি এখন শিক্ষক সঙ্কটের মারাত্মক চাপে। দু’জন শিক্ষাকর্মী ও দু’জন শিক্ষক বাদ পড়েছেন। ডিসেম্বরের পরে আরও দু’জন শিক্ষক চলে গেলে সমস্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে শিক্ষামহল মনে করছে। শিক্ষক ছাঁটাই ও অযোগ্য প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চললেও, তার ধাক্কায় হাঁসড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কার্যত অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)