• তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষক দিবস উদযাপনে রাধাকৃষ্ণণ হলেন ‘রাধাকৃষ্ণ’!
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। তার আগে যাঁর নামে দিনটি উদযাপিত হবে, সেই রাধাকৃষ্ণণের নাম গুলিয়ে গেল বর্ধমানে। আর সেই গুলিয়ে দেওয়ার কারিগর অন্য আর কেউ নয়, খোদ তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন। তাদের আমন্ত্রণপত্রে ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ-এর জায়গায় লেখা হয়েছে ‘রাধাকৃষ্ণ’! এতবড় ভুল নিয়ে দিব্যি সেই আমন্ত্রণপত্র বিলিও হয়ে যায়। বিশিষ্টজনেরা হাতে পেতেই তোলপাড় শুরু। কার্ডটি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন শাসকদল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের কর্মকর্তারা। নিন্দায় মুখর হন জেলার শিক্ষাবিদ থেকে নেট নাগরিকদের একটা বড় অংশ। কেউ কেউ সরস মন্তব্য করে খোঁচাও দিয়েছেন এই বলে—‘ছাপার ভুলে রাধাকৃষ্ণণের নাম রাধাকৃষ্ণ হতেই পারে। কিন্তু, এমন মারাত্মক ভুল যাঁদের চোখে পড়ে না, তাঁদের দৃষ্টিশক্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠবেই!’ রাজ্যে যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষক বিতর্কের মাঝে অন্যমাত্রা যোগ করেছে গোটা বিষয়টি। যদিও পরে ‘ভুল’ সংশোধন করে কিছু কার্ড ছাপিয়ে মুখরক্ষা করেছে শিক্ষক সংগঠনটি। তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অতনু নায়েক অবশ্য দাবি করেন, ‘রাধাকৃষ্ণণই লেখা রয়েছে। এটা নিয়ে কেউ কেউ ভুল প্রচার করছেন।’ 

    ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ হলেন দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং রাষ্ট্রনায়ক। স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি। দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। জন্ম তামিলনাড়ুর তিরুট্টানিতে। তাঁর জন্মদিনকে সামনে রেখেই গোটা দেশেই পালিত হয় শিক্ষক দিবস। অন্যদিকে, রাধাকৃষ্ণ বলতে বোঝায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর রাধার যুগলবন্দি আরাধ্য বিগ্রহকে। দু’টি নাম সম্পূর্ণ আলাদা। অথচ, তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন যে শিক্ষকদিবস উদযাপন করতে চলেছে, সেই অনুষ্ঠানের কার্ডে রাধাকৃষ্ণণের ছবির নীচে লেখা ‘ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণ’। কার্ডটি ছাপিয়েছেন শিক্ষকরাই। তাঁরা এমন ভুল করবেন, তা ভাবতেই পারছেন জেলার শিক্ষাবিদরা। অনেকের বাড়িতে কার্ডটি পৌঁছনোর পর দ্রুত সেটি লুকিয়ে ফেলাও হয় বলে জানা গিয়েছে। কেননা, খুদে পড়ুয়ারা দেখলে তাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যলয়ের অবসরপ্রাপ্ত অ্যসিটেন্ট রেজিস্ট্রার দেবমাল্য ঘোষ বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমাজের আয়না। মানুষ মাত্রই ভুল করতে পারে। তা বলে শিক্ষক শিক্ষিকারা এতবড় ভুল করবেন! কার্ড ছাপানোর আগে তাঁদের বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল। মহান কোনও ব্যক্তির নামের বানান ভুল লেখা হলে তাঁকে অপমান করা হয়। তাছাড়া একটা শব্দ এদিক সেদিক হলে পুরো মানেটাই বদলে যায়। বিষয়টি হাসির খোরাক হয়ে যায়।’ বিজেপি নেতা তথা শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, শিক্ষকরা এমন কাণ্ড করেছেন ভাবলেই অবাক লাগছে। এতবড় ভুল চোখ এড়াল কিভাবে। পড়ুয়ারা এই কার্ড দেখলে হাসাহাসি করবে।’ 

    তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে শোরগোল  শুরু হতেই ফের নতুন কিছু কার্ড ছাপানো হয়। সেখানে অবশ্য ‘রাধাকৃষ্ণ’ নেই। রাধাকৃষ্ণণ রয়েছে। তৃণমূলের এক শিক্ষক নেতা বলেন, অনেক দেরিতে বিষয়টি চোখে পড়েছে। পরে নতুন কার্ড ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)