নকল ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরির হদিশ, আসানসোলে হানা দিল্লি পুলিস টিমের
বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ভিনদেশিদের নকল আধার কার্ড, ভোটার কার্ড তৈরির ঘটনায় নাম জড়িয়ে গেল শিল্পাঞ্চলের। শুধু আধার বা ভোটার নয়, পাসপোর্ট ও প্যান কার্ড তৈরিরও চক্র গজিয়ে উঠেছিল আসানসোলেই। দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল অভিযান চালাতেই পর্দা ফাঁস। উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আসানসোল ও বারাবনিতে দীর্ঘ অভিযান চালায় দিল্লি পুলিস। ধরা পড়েছে চক্রের সঙ্গে যুক্ত আসানসোলের দুই অভিযুক্ত। তাদের একজন আসানসোলের কুমারপুরে একটি আধার সেন্টারে কর্মী হিসেবে কাজ করে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এই চক্রের কাছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিলেই নকল ভারতীয় নথি বানিয়ে দেওয়া হতো। দেশ-বিরোধী কাজ করার জন্যও এই কাণ্ড চলছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাই তদন্তের স্বার্থে এনিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি দিল্লি বা আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের অফিসাররা। রবিবার এক অভিযুক্তকে ট্রানজিট রিমান্ডে দিল্লি নিয়ে যেতে আসানসোল আদালতে এসেছিল দিল্লি পুলিসের ওই টিমটি।
শনিবার দুপুরে আচমকা দিল্লি পুলিসের স্পেশাল টিমের সদস্যরা চলে আসেন বারাবনিতে। সৌরভ বাউরি নামে এক যুবকের বাড়িতে ঢুকে পড়েন তাঁরা। তাকে তুলে নিয়ে যেতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হয়। তখনই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় স্থানীয় পুলিস। জানা যায়, সৌরভ ভুয়ো নথি তৈরি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে বারাবনি থানাতে নিয়ে যায় দিল্লি পুলিস।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ভারতীয় নকল নথি সহ দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছিল দিল্লি পুলিস। কারা সেই নথি তৈরি করে দিল, তার তদন্ত করতে গিয়েই দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই চক্রের হদিশ পায় দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল। তদন্তকারী অফিসাররা প্রথমে গ্রেপ্তার করে আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের বাসিন্দা সারফারজ আলমকে। তাকে নিয়েই শনিবার আসানসোলে আসে দিল্লি পুলিস। স্থানীয় পুলিসকে জানিয়ে তার বাড়িতে দিনভর তল্লাশি চলে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট সূত্র পেয়েই তারা হানা দেয় বারাবনির সৌরভ বাউরির বাড়িতে।
সূত্রের খবর, আধার সহ যে কোনও পরিচয় পত্র তৈরির ক্ষেত্রে সৌরভ ছিল অত্যন্ত পারদর্শী। প্রায় দিনই বাইরে থেকে লোক তার বাড়িতে আসত। চার বছর ধরে আসানসোলের আধার সেন্টারে সে কাজ করছে। প্রথমে দিল্লি পুলিসের টিমকে এলাকাবাসী তেমনি বহিরাগত ভেবে ছিলেন। পরে জানা যায় সৌরভের কুকীর্তি। এদিন আদালতের বাইরে হাজির হয়েছিলেন সৌরভের আত্মীয়রা। দিল্লি পুলিসের অফিসারদের তাঁরা বলতে থাকে গরিব ছেলে ছেড়ে দিন। অফিসার জানান, বাংলাদেশিদের নকল নথি বানিয়েছে। বিনিময়ে নিয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সে কী করে গরিব হয়? তদন্তকারিরা আদালতে যে নথি দিয়েছে, সেখানেও চক্রের ভয়ঙ্কর উদ্দেশ্য সামনে এসেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকানো থেকে নকল নথি বানিয়ে দেওয়ার কাজ করত চক্রটি। যার কেন্দ্রস্থল আসানসোল। এখান থেকে নকল নথি বানিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশিরা। এমনটাই সন্দেহ করছে দিল্লি পুলিস। এসিপি বিশ্বজিৎ নস্কর বলেন, অভিযান হয়েছে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা সম্ভব নয়। বারাবনি থানার পুলিসও বলে, পুরো বিষয়টির উপর অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতীকী ছবি