• জেলায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দুই বছরে বেড়েছে ৪৬৭ কোটি টাকা
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক,কৃষ্ণনগর: শিল্প-শূন্য বাংলা বলে প্রচার করে বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের নাকি দফারফা অবস্থা।সত্যিই কি তাই? নদীয়া জেলার তথ্য বলছে অবশ্য অন্য কথা। বর্তমানে জেলার মধ্যে শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রতি আর্থিক বছরে এই পরিমাণ লাফিয়ে বাড়ছে। 

    ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।‌ আর তাতেই শিল্পের ছবি বদলাচ্ছে জেলায়। বিগত দু বছরে প্রায় সাড়ে চারশো কোটির বেশি  বিনিয়োগ হয়েছে। সবমিলিয়ে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০০ কোটি টাকায়। মূলত ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্রশিল্পের জেরেই বিনিয়োগের হার ঊর্ধ্বমুখী। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরে জেলায় উদ্যোগপতির সংখ্যাও বেড়েছে। রাজ্য সরকারের উদ্যম রেজিস্ট্রেশন পোর্টাল পর্যালোচনা জেলার শিল্প সম্ভাবনার এই চিত্র উঠে এসেছে। মূলত কৃষি নির্ভরশিল্পের লগ্নির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করছেন আধিকারিকরা। 

    নদীয়া জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার পুষ্পেন্দু মল্লিক বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে উদ্যোগপতির সংখ্যার পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। বিভিন্ন স্তরে উদ্যোগপতিরা আমাদের উদ্যম পোর্টালে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেন। প্রশাসনের তরফ থেকে তাঁদের ব্যবসার বৃদ্ধি ঘটাতে নানাভাবে সাহায্য করা হয়।’

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে নদীয়া জেলায় উদ্যম পোর্টালে ক্ষুদ্র, ছোটো ও  মাঝারি শিল্পোদ্যোগী মিলিয়ে ১৪ হাজার ২০০ জন রেজিস্ট্রেশন করান। তাদের সম্মিলিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ হাজার ৩৬১ জন উদ্যোগপতি রাজ্য সরকারের এই পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করেন। সে বছর বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৮৪ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৭০৬ জন উদ্যোগপতি পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করান। সেখানে দেখা গিয়েছে বিনিয়োগের পরিমাণ ৮১৭ কোটি। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থ বছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর পর্যন্ত ৪৬৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ বেড়েছে। অন্যদিকে দ্বিগুণ হয়েছে উদ্যোগপতির সংখ্যা। বর্তমানে নদীয়া জেলায় উত্তম রেজিস্ট্রেশনে উদ্যোগপতির সংখ্যা ৯০ হাজার ছুঁতে চলেছে। উদ্যমে পোর্টালের মাধ্যমে উদ্যোগপতিরা মাঝারি, ছোটো, ক্ষুদ্রশিল্পের জন্য আবেদন করেন। উদ্যম পোর্টালে নাম থাকলে, সেই শিল্পকে বাস্তবায়ন করার জন্য  সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করা হয়। ব্যাঙ্কে লোন পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হবে। যাতে উদ্যোগপতিরা বিনা জটিলতায় কাজ করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বরাবরই রাজ্যজুড়ে শিল্পের পরিবেশ তৈরির ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। অনেকেই জুট মিল, রাইস মিল তৈরির জন্য আবেদন করছেন। এছাড়াও ক্লিপের ব্যবসা, কাঁস-পিতলের ব্যবসা, ইমিটেশনের গয়নার ব্যবসার বৃদ্ধি ঘটছে নদীয়া জেলায়। বাড়ছে কর্মসংস্থানও।

    চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘সিনার্জি’। সেখানে নদীয়া জেলার প্রায় ১৫০ জন উদ্যোগপতি শিল্পের প্রসারে মোট ৮০২ কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব পেশ করেন। জানা গিয়েছে, কৃষি শিল্প, প্লাস্টিক-কেমিক্যাল, টেক্সটাইল, বনশিল্প-সহ একাধিক ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগ করা হবে। 

    এর ফলে প্রায় ২৬ হাজার ৫০৫ জনের কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু কৃষিভিত্তিক শিল্পেই এসেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ, যা বর্তমানে বাস্তবায়নের পথে।
  • Link to this news (বর্তমান)