বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে উৎপাদিত কাঁচামাল থেকে আয়ের উদ্যোগ
বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘ওয়েস্ট টু এনার্জি’ কিংবা ‘বর্জ্যই সম্পদ’-এই কথা এখন খুব প্রচলিত। বর্জ্য পুনর্নবীকরণ বা প্রক্রিয়াকরণ করে তা ফের বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়। সেই পথে হেঁটে একদিকে যেমন পচনশীল বর্জ্য থেকে সার, অপচনশীল বা প্লাস্টিকজাত জঞ্জাল থেকে প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়ে তুলেছে কলকাতা পুরসভা তেমনই নির্মাণ-বর্জ্য বা রাবিশ পুনর্নবীকরণ করতেও ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এবার সেই নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে হাতে আসা স্টোনচিপ, সিমেন্ট ও বালি বিক্রি করে বিপুল আয়ের উদ্যোগ নিল পুর কর্তৃপক্ষ।
রাজারহাটের পাথরঘাটায় পিপিপি মডেলে নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়েছে পুরসভা। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টন নির্মাণ-বর্জ্য পুনর্নবীকরণ করে গড়ে ১৫৫ থেকে ১৬৫ টন কাঁচামাল পাওয়া যায়। যার মধ্যে সিমেন্টের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহারযোগ্য কংক্রিটের গুঁড়ো, স্টোনচিপ, বিভিন্ন ধরনের বালি মেলে। যেগুলি পুনরায় নির্মাণ-কাজে ব্যবহার করা যায়। এবার সেগুলিই বাইরে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। পুর কমিশনারের তরফে এই সংক্রান্ত একটি নোটিস জারি করে নির্মাণ-বর্জ্য থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের কাঁচামালের দাম বেধে দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে সবরকম কাঁচামালের দাম প্রতি টনে ৮৪৯ টাকা। তার সঙ্গে পরিবহণ খরচ যোগ করে প্রতি টনের দাম ন্যূনতম ১ হাজার ১৯৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪১৯ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এই দামের তালিকা প্রতি দু’বছর অন্তর রিনিউ করা হবে। এই প্রসঙ্গে পুরসভার জঞ্জাল সাফাই ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক অফিসার বলেন, পাথরঘাটায় আমরা শুধু জমি দিয়েছি। একটি সংস্থা প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়েছে। ফলে নির্মাণ-বর্জ্য পুনর্নবীকরণ করে যে কাঁচামাল উৎপাদন হচ্ছে, তার বিক্রির টাকা সেই সংস্থাকেই দেওয়া হবে। শুধু পাথরঘাটা ইউনিট থেকে অন্যত্র পাঠানোর জন্য প্রতি কিলোমিটারে যে পরিবহণ খরচ পড়ছে, সেই টাকাটা পুরসভা নেবে। ওই অফিসার আরও বলেন, প্রতি টন এমন কাঁচামাল পরিবহণে বিভিন্ন দূরত্বে ন্যূনতম ৩৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৭০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাহলে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫০ টন এমন কাঁচামাল বেচতে পারলে কম করে সাড়ে ৫২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮৫ হাজার টাকা করে কোষাগারে আসবে পুরসভার। বার্ষিক হিসেব করলে সেটা ৩০ কোটি টাকা ছাড়াবে। ভবিষ্যতে আরও বেশি পরিমাণে নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে পারলে আয়ের হিসেবটা আরও বাড়বে।
কিন্তু নির্মাণ-বর্জ্য থেকে উৎপাদিত এই ধরনের কাঁচামাল ব্যবহারে সুবিধা কী? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই কাঁচামাল ব্যবহার করলে তাতে নয়া নির্মাণ খরচ অন্তত ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হবে।