• প্রয়াত অভিরূপ গুহঠাকুরতা, অবসান রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক স্বর্ণময় অধ্যায়ের
    হিন্দুস্তান টাইমস | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • অবসান হল রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক অধ্যায়ের। ভিন দেশে পাড়ি দিলেন অভিরূপ গুহঠাকুরতা। ৭৫ বছর বয়সে রবিবার প্রয়াত হলেন প্রবাদপ্রতিম এই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। নিজ বাসভবনে বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন দক্ষিণীর প্রবীণ শিক্ষক।

    শৈশব থেকেই তাবড় শিল্পীসঙ্গ

    ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশের বরিশালে জন্ম অভিরূপের। নির্মল চন্দ্র ও কমলা গুহঠাকুরতার কনিষ্ঠ সন্তান ছোট থেকেই ছিলেন রবীন্দ্রানুরাগী। শৈশব বয়সেই তাবড় তাবড় রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ক-গায়িকাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন এবং শৈলজারঞ্জন মজুমদারের মতো ব্যক্তিরা নিয়মিত গুহঠাকুরতা বাড়িতে সঙ্গীতের আসর বসাতেন। সেখান থেকেই সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ। পরে দেবব্রত বিশ্বাস , সুবিনয় রায়ের মতো গায়কদের সান্নিধ্যে এসে আরও সমৃদ্ধ হওয়া। সুবিনয় রায়ের কাছে দীর্ঘ ১০ বছর গান শিখেছিলেন অভিরূপ।

    যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা

    প্রথমে দক্ষিণীতেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা হয়েছিল অভিরূপের। পরে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। প্রসঙ্গত, কলকাতার অন্যতম প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন রবীন্দ্রসঙ্গীত কলাকেন্দ্র হল দক্ষিণী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করেন অভিরূপ। তবে রবীন্দ্রনাথের গান বারবার আকর্ষণ করেছিল তাঁকে। ১৯৭৬ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শন নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক আয়োজিত প্রতি বছরের রবীন্দ্রজয়ন্তীতেই তিনি ছিলেন অন্যতম শিল্পী।

    রবীন্দ্রসঙ্গীত গবেষক পীতম সেনগুপ্তের কথায়, ‘অভিরূপ গুহঠাকুরতার গান আশির দশক থেকে শুনছি। ভরাট কণ্ঠ, দরাজ গায়কী। রবীন্দ্রনাথের গানের ভাব প্রকাশে তাঁর দক্ষতা ও স্বকীয়তা নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়। মনে রাখতে হবে, অভিরূপ গুহঠাকুরতা যখন কলকাতার মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে এসেছিলেন, তখন দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সাগর সেনের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা ছিলেন। তাঁদের পরের প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পরিচিত হওয়ার বিষয়টি ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। নিজের শিক্ষা, সংযম, রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা, প্রেম ও প্রত্যয়ের ফলেই তা সম্ভবপর হয়েছে। দু-একটি ঘরোয়া আসরে তাঁর কণ্ঠে শচীন দেববর্মণের গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেও এক অনন্য অভিজ্ঞতা বলা যায়।’

    দেশবিদেশে নানা অনুষ্ঠান

    ১৯৯২ সালে লন্ডনে অবস্থিত একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন নূপুর স্কুল অফ রবীন্দ্রসঙ্গীতের আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড সফর করেন তিনি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (ICCR)-এর তত্ত্বাবধানে এবং আবু ধাবি কালচারাল ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে তিনি ১৯৯৫ সালে রবীন্দ্র জয়ন্তীতে আবু ধাবি এবং দুবাইতে সঙ্গীত পরিবেশনও করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে টেগোর সোসাইটি অফ হিউস্টন কর্তৃক উত্তর আমেরিকান বাঙালি সম্মেলনে পরিবেশনার জন্য অভিরূপকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। একই বছর তিনি নিউ ইয়র্ক, বোস্টন এবং লন্ডনেও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। দীর্ঘ ৭৫ বছরের নিরলস সেই রবীন্দ্রসাধনার অবসান হল রবিবার।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)