• আটকে থাকা বহু বিল নিয়ে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে বিজেপি এবং মোদী সরকারকে নিশানা করতে চলেছে তৃণমূল
    আনন্দবাজার | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। এই অধিবেশনে মূলত দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে— প্রথমত, বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ধারাবাহিক আক্রমণ ও ভয় দেখানো, দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের শুরু করা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার বিরোধিতা। তবে এখানেই শেষ নয়। একঝাঁক বিল, যা বিধানসভায় সর্বসম্মত ভাবে পাশ হলেও এখনও রাজভবন বা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন না পাওয়ায় আইন হয়ে উঠতে পারেনি, সেই প্রসঙ্গও আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। তৃণমূল বিধায়কেরা এ বিষয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘসূত্রিতা ও অসহযোগিতার অভিযোগ তুলতে চলেছেন।

    নবান্ন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় বিশেষ অধিবেশনকে ঘিরে প্রস্তুতি শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও এই আলোচনায় অংশ নেবেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহল জানাচ্ছে, সর্বসম্মত ভাবে পাশ হওয়া একাধিক বিল দিল্লি বা রাজভবনে অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে আছে। ফলে সেই বিলগুলির ভিত্তিতে যে আইন কার্যকর হওয়ার কথা, তা সম্ভব হচ্ছে না। এর জেরে সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা ও ন্যায়বিচার ব্যাহত হচ্ছে।এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করবেন । তৃণমূলের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সক্রিয় ভূমিকার কারণেই রাজ্যের বিলগুলিকে আটকে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে রাজ্য প্রশাসন আইনি কাঠামোয় ফেঁসে যাচ্ছে। রাজভবন ও রাষ্ট্রপতি ভবনকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের কার্যকলাপে অসহযোগিতা করছে বলেই দাবি শাসকদলের।

    নবান্নের সূত্র অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে চিঠি দিয়ে সমস্ত ‘অপেক্ষমাণ বিল’-এর বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। এই তথ্যগুলিকে হাতিয়ার করেই বিধানসভায় বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুলাই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ‘অপরাজিতা বিল’ ফেরত পাঠানো হয় রাজভবনে। সেখানে রাজ্যের কাছ থেকে কিছু ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ-সহ বার্তা নবান্নে পাঠিয়েছে রাজভবন। যদিও এখনও পর্যন্ত রাজ্যের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা পাঠানো হয়নি, তবে তা প্রস্তুত করার কাজ চলছে বলেই নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

    বিশেষ অধিবেশনকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং বিল আটকে রাখার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে কোণঠাসা করতে চাইছে। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা বলেন, “দিল্লি শুধু প্রশাসনিক ভাবে নয়, রাজনৈতিক ভাবেও রাজ্য সরকারকে অচল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিধানসভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই স্পষ্ট বার্তা যাবে।” আগামী সোমবারের বিশেষ অধিবেশন তাই শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং কেন্দ্র ও রাজ্যের সংঘাতের মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে। মমতার বক্তব্যেই পরিষ্কার হবে, রাজ্য কী ভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে চাইছে। রাজনীতির অঙ্গনে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)