• পুজোয় ১০ হাজার টাকার সন্দেশ দিয়েছিলেন লর্ড ক্লাইভ, আন্দুলের জমিদার বাড়ির পুজো আজও ঐতিহ্যে মোড়া
    এই সময় | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ফিটন গাড়ি এসে থামল জমিদার বাড়ির দেউড়়িতে। মুহূর্তের মধ্যে গোরা সেনা ঘিরে ফেলল গোটা এলাকা। ছুটে এল জমিদার বাড়ির পাইক, বরকন্দাজরা। সবাই তটস্থ। কী ব্যাপার?

    ফিটন গাড়ি থেকে মুখ বাড়ালেন এক ইংরেজ। সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠল ঢোল-নাকাড়া, মঙ্গলশঙ্খ। গাড়ি থেকে একের পর এক নামতে শুরু করল মিষ্টির ঝুড়ি। শুধু সন্দেশ আর সন্দেশ। ১০ হাজার টাকার সন্দেশ!

    একটা ঝুড়িতে ১০৮টি পদ্ম। সকলের শেষে নামলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মেজর জেনারেল লর্ড ক্লাইভ। সেই সন্দেশ আর রক্তপদ্ম নিয়ে নাটমণ্ডপের দিকে এগিয়ে চললেন তিনি।

    সেটা ১৭৭০ সাল। আন্দুলের জমিদার রামলোচন রায়ের দুর্গাপুজোর প্রথম বছর। একসময়ে ক্লাইভের দেওয়ান ছিলেন রামলোচন। তাই তাঁর পুজোয় পদধূলি দিয়েছিলেন লর্ড ক্লাইভ স্বয়ং। এই ঘটনার কথা আজও হাওড়াবাসীর মুখে মুখে ফেরে।

    ষষ্ঠীতে বোধন। তবে ১২ দিন আগেই কামান দেগে শুরু হতো জমিদার বাড়ির পুজো। পর পর তিনবার গর্জে উঠত কামান। জমিদার বাড়ির পাশেই অন্নপূর্ণা আর দ্বাদশ শিবের মন্দিরে সেই কামান আজও রাখা আছে। তবে তার মুখ বন্ধ। গর্জন করে না আর।

    জমিদার বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে সরস্বতী নদী। সেই সময়ের কিশোরী নদী আজ পলিজর্জর। এক সময়ে এই নদী দিয়েই নৌকো করে বাণিজ্যে যেতেন সওদাগররা। এখন নদীর হতশ্রী চেহারা দেখলে বিশ্বাসই হবে না সেই কথা। যাই হোক, সেই নদীর জল আর গঙ্গাজল মিশিয়ে দেবীর ঘট ভরার প্রথা ছিল। এখন শুধু গঙ্গাজলেই ঘট ভরা হয়।

    পুজোর তিনদিন ধরে চলত বাইজি নাচ। যাত্রা দেখতে আসতেন আশপাশের অন্তত দশটা গ্রামের মানুষ। গানের লড়াই হতো জোর। না, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি এখানে আসেননি কোনওদিন। তবে যাঁরা আসতেন, কম যেতেন না তাঁরাও। আসর জমিয়ে রাখতেন সারারাত।

    সে দিন আর নেই। তবে আভিজাত্য কমেনি একচুলও। মেলা বসে না ঠিকই। যাত্রা হয় না আর, বাইজি নাচ তো দূর অস্ত। তবে এখনও বোধনের ১২ দিন আগেই ঢাকে কাঠি পড়ে। পুজোর যাবতীয় রীতিনীতি মানা হয় পুঙ্খানুপুঙ্খ। সাবেক রীতিতে একচালার প্রতিমা হয় এখনও। হাওড়াবাসী জমিদারবাড়ির পুজোয় গিয়ে মাথা ঠেকায় আজও। বুকে টেনে নেয় ডাকের সাজে, চালচিত্রে আঁকা পুরাণের গল্পে পুরনো ঐতিহ্যের গন্ধ।

  • Link to this news (এই সময়)