• জীবনকৃষ্ণের প্রভাবে ৭৫ জনের চাকরি, দাবি ইডির
    আনন্দবাজার | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ধৃত তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার সুপারিশে ৭৫ জন ‘অযোগ্য’ প্রার্থীর চাকরি হয়েছিল বলে আদালতে নথি পেশ করে দাবি করল ইডি। শনিবার জীবনকৃষ্ণকে বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতে তোলা হয়েছিল।

    মামলার তদন্তকারী অফিসার লিখিত ভাবে আদালতে জানিয়েছেন, জীবনকৃষ্ণের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া ৭৫ জন অযোগ্য শিক্ষককে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইডির দাবি, জীবনকৃষ্ণের সুপারিশ অনুযায়ী, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের সহকারী শিক্ষক পদেই বেশির ভাগ অযোগ্য প্রার্থীর চাকরির ব্যবস্থা করা হয়।

    তদন্তকারী অফিসারের দাবি, জীবনকৃষ্ণ এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, তাঁর পাঠানো নামের তালিকাভুক্তদের ‘সিদ্ধিলাভ’ সাধারণত ব্যর্থ হত না। তাঁর সুপারিশ অনুযায়ী অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি না হলে তিনি ফের চাপ দিয়ে কাজ হাসিল করতেন বলেও ইডি সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ১০-২০ লক্ষ টাকা নিতেন জীবনকৃষ্ণ। তবে অযোগ্যদের চাকরি বাবদ এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ-সহ অন্য কর্তাদেরও ৫-৭ লক্ষ টাকা তিনি দিতেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।

    তদন্তকারী অফিসারের দাবি, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অন্তত ৩০০ কোটি টাকার বেআইনি আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। ২৩৮ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সদ্য প্রকাশিত ২০১৬ সালের চাকরিহারাদের মধ্যে দাগিদের নামের তালিকায় জীবনকৃষ্ণের সুপারিশধন্য ক’জন রয়েছেন, সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। ইডির এক কর্তা বলেন, ‘‘এসএসসি-র তালিকায় জীবনকৃষ্ণের সুপারিশ অনুযায়ী অযোগ্যদের নাম রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি, জীবনকৃষ্ণের সুপারিশে চাকরি পাওয়া ৭৫ জনকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।’’

    ইডির ওই কর্তার কথায়, ‘‘জীবনকৃষ্ণ এবং জেল হেফাজতে থাকা প্রসন্ন রায়ের যোগসাজশে এসএসসি-র বিভিন্ন কর্তা-সহ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা পৌঁছেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। প্রয়োজনে সংশোধনাগারে গিয়ে প্রসন্ন ও জীবনকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।’’

    জীবনকৃষ্ণ, তাঁর স্ত্রী টগর এবং শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথির ফরেন্সিক বিশ্লেষণও করা হচ্ছে বলে ইডি সূত্রের খবর। ওই পদ্ধতিতে ফরেন্সিক অডিট বিশেষজ্ঞেরা প্রতিটি লেনদেনের সময়কাল পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখেন। এখনও পর্যন্ত জীবনকৃষ্ণ, তাঁর পরিবারের লোকজন এবং শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-সহ ঘনিষ্ঠদের প্রায় ৫০টির বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি তদন্তকারীদের আতশকাচের নীচে রয়েছে। জীবনকৃষ্ণের নাবালক ছেলের নামের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও কয়েক লক্ষ টাকা রাখা হয়েছে, দাবি।

    এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, “বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কে জীবনকৃষ্ণ ও তাঁর স্ত্রীর নামে যৌথ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গত দশ বছরে কয়েক কোটি টাকা জমা হয়েছে। ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের নথিরও ফরেন্সিক বিশ্লেষণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”

    তবে শনিবার আদালতে বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে বলেন, “আমি ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। আমরা বনেদি ব্যবসায়ী। আমাদের রেশন ডিস্ট্রিবিউশন, চালকল, হিমঘর-সহ নানা ব্যবসা রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে আমি জড়িত নই। সাত বছরে আমার স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৬ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। তা স্বাভাবিক। আমি গ্রামের ছেলে। আমি বিধায়ক। কোথাও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। তদন্তেও সব রকম ভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করছি।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)