• মেডিক্যাল কাউন্সিল কর্তার নার্সিংহোম বন্ধ কমিশনের
    আনন্দবাজার | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • তিনি নিজে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের ‘পেনাল এবং এথিক্যাল কমিটি’-র অন্যতম সদস্য। অর্থাৎ ডাক্তারের পরিষেবা নিয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়লে, তা খতিয়ে দেখে শাস্তি নির্ধারণ করা তাঁর কাজ। অথচ, সেই ‘দোষ বিচারকারী’ চিকিৎসক-কর্তার নিজের নার্সিংহোমেই চিকিৎসায় গুরুতর নিয়মভঙ্গের অভিযোগে রোগী ভর্তি ও ইনডোর পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন।’ আগামী ৮ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে শুনানির দিন রয়েছে। তার পরে ওই নার্সিংহোমের ভবিষ্যৎ নিয়ে রায় দেবে কমিশন।

    রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের পেনাল ও এথিক্যাল কমিটির অন্যতম কর্তা হলেন প্রবীণ চিকিৎসক এম এ কাসিম। তিনি আবার জগৎবল্লভপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক। এ হেন চিকিৎসকের নিজস্ব নার্সিংহোম রয়েছে ডায়মন্ড হারবার রোডে। গত ৬ অগস্ট থেকে চিকিৎসায় গুরুতর গাফিলতির অভিযোগে সেই নার্সিংহোম বন্ধ করে দিয়েছে রেগুলেটরি কমিশন। যাঁরা সেখানে ভর্তি ছিলেন সেই রোগীদের অন্যত্র রেফার করা হয়েছে। শুধু বহির্বিভাগে ছাড় দেওয়া হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসক এম এ কাসিম আপাতত বহির্বিভাগেও বসছেন না। তাঁর নার্সিংহোমের সামনে লাগানো পোস্টারে জানানো হয়েছে, ‘বয়সজনিত অসুস্থতা’র কারণে তিনি রোগী দেখতে পারছেন না। তবে অভিযোগ, আসল গল্পটা অন্য।

    ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন’-এর চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই নার্সিংহোমে এক গর্ভবতী মহিলা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। তখন এম এ কাসিমের প্রেসক্রিপশনে একটি ইঞ্জেকশনের নাম লেখেন হাসপাতালের এক কর্মী, এবং সেখানেই না থেমে তিনিই সেই ইঞ্জেকশন ওই মহিলাকে দেন। তার পরে তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায়। মহিলার পরিবার কমিশনে অভিযোগ করে। অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা তদন্ত করে সাংঘাতিক তথ্য পাই। দেখা যায়, যে ব্যক্তি প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন এবং ইঞ্জেকশন দিয়েছেন তিনি আসলে এম এ কাসিমের এক জন সাহায্যকারী কর্মী। সেই সময় এম এ কাসিম ওটিতে ছিলেন। এর পরেই আমরা হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছি।”

    তাঁর আরও বক্তব্য, “চিকিৎসক না হয়ে এক জন প্রেসক্রিপশন লিখছেন এবং ইঞ্জেকশন দিয়ে দিচ্ছেন কলকাতার বুকে এক নার্সিংহোমে! পরে অবশ্য ওঁরা দাবি করেছেন, ওই ব্যক্তি নাকি হোমিয়োপ্যাথির চিকিৎসক! বিষয়টি নিয়ে ৮ তারিখ কমিশনে শুনানি রয়েছে।” এম এ কাসিম এ ব্যাপারে বলেন, “৮ তারিখের আগে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” নার্সিংহোমের ওয়েবসাইটে অবশ্য ইনডোর বন্ধ হওয়ার কথা বা কমিশনের শাস্তি সংক্রান্ত নির্দেশের ব্যাপারে এখনও কিছু বলা নেই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)