বিধানসভা নির্বাচন আর কয়েক মাস দূরে। নানা ধরনের জনমুখী প্রকল্পে যখন গতি বাড়ানোর কথা বলছে রাজ্য সরকার, সেই সময়েই উল্টো পথে পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে শ্রম দফতরে! অনলাইনে পরিষেবা সচল রাখার দায়িত্ব যাদের, সেই সংস্থাকে বদল করে দেওয়ায় এক ক্লিকে সহজে নানা কাজ আপাতত হচ্ছে না। ‘বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা’র (বিএমএসএসওয়াই) মতো রাজ্য সরকারের জনপ্রিয় ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের স্বাভাবিক কাজেও ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারই মধ্যে অসংগঠিত শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (সিইও) পদে নিয়ম ভেঙে তুলনায় নিম্ন পদমর্যাদার এক আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়ায় দফতরের অন্দরে দানা বাঁধছে ক্ষোভ। মন্ত্রীর অবশ্য আশ্বাস, দায়িত্ব হাতবদলের জেরে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, দ্রুত সে সব মিটে যাবে।
সূত্রের খবর, শ্রম দফতরে নতুন নথিভুক্তি থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ যে পোর্টাল মারফত হয়, সে সব দেখভালের দায়িত্ব ছিল ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারের (এনআইসি) হাতে। সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে সেই দায়িত্ব এখন চলে গিয়েছে ডব্লিউটিএল সংস্থার হাতে। তার পর থেকে পোর্টাল মারফত পরিষেবার কাজ চালাতে নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে দফতরের আধিকারিকদের। কাজের গতি কমে গিয়েছে। এর পরে বিএমএসএসওয়াই পোর্টালের হাতবদল সম্পন্ন হয়ে গেলে পরিষেবার হাল কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন তাঁরা। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “বিএমএসএসওয়াই পোর্টাল গত ২০২০-২১ সালে ডব্লিউটিএল-এর হাত থেকে নিয়েই এনআইসি-কে দেওয়া হয়েছিল। তারা ধাপে ধাপে এক রকম ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, ভাল কাজ হচ্ছিল। এখন আবার আগের সংস্থাকে দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার কী কারণ, বোঝা যাচ্ছে না। এই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে বিপুল সংখ্যক উপভোক্তার কারণে যে ধরনের চাপ থাকে, তা সামাল দেওয়া এর পরে কঠিন হয়ে পড়তে পারে। অন্তত শ্রম দফতর ও লেবার ডিরেক্টরেট-এর অন্যান্য পোর্টালের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা তেমনই বলছে।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিএমএসএসওয়াই প্রকল্পে এখন নথিভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা এক কোটি ৮২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭৫ জন। রাজ্যের ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে সাত বার আবেদনের নিরিখে শীর্ষে এসেছে এই প্রকল্প। সরকারি এক আধিকারিকের বক্তব্য, “কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, বাহন বা অর্থ দফতরের গুরুত্বপূর্ণ সার্ভারের কাজ সবই এনআইসি দেখে। শ্রম দফতরে অন্য রকম সিদ্ধান্ত নিতে হল কেন, বোঝা কঠিন!” এই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প শুরুর বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার ১০ দিন পরেও নতুন পোর্টাল চালু করা গেল না কেন? এর ফলে ভুগছেন মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো জেলার মানুষ।
এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য বলছেন, “অনলাইন পরিষেবা চালানোর পোর্টালের দায়িত্ব এখন ডব্লিউটিএল-কে দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে। ফ্যাক্টরি, বয়লার, এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের মতো শাখার কাজ শেষ। আশা করছি, বাকিটাও হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি।”
এরই সঙ্গে গোল বেধেছে অন্য দিকেও। রাজ্যের অসংগঠিত শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের নজরদারিতে চলে বিএমএসএসওয়াই। ‘পশ্চিমবঙ্গ অসংগঠিত ক্ষেত্র শ্রমিক কল্যাণ আইন, ২০০৭’ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের যুগ্মসচিব স্তরের নীচে নন, এমন কোনও আধিকারিককে ওই পর্যদের সিইও নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু কয়েক দিন আগে ডেপুটি লেবার কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিককে ওই পর্ষদের নতুন সিইও করা হয়েছে। যাঁর তুলনায় ‘সিনিয়র’ বহু আধিকারিক রাজ্য ও জেলা স্তরে শ্রম দফতরে কাজ করছেন। সূত্রের খবর, এই নিয়োগের জেরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে দফতরের অন্দরে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজেও তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শ্রম দফতরের শীর্ষ স্তরের কেউ এই নির্দেশ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। তবে এক আধিকারিকের মতে, “এ কথা ঠিক যে, অতিরিক্ত বা বিশেষ লেবার কমিশনারের নীচে কেউ আগে সিইও-র দায়িত্ব পাননি।”