গত বছর ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধের নির্দেশ ছিল। এতে উত্তরবঙ্গের উৎপাদিত আলু ভিন্ রাজ্যে যায়নি বললেই চলে। তাতে প্রভাব পড়েছিল নতুন আলুর দামে। বাধ্য হয়ে অনেক চাষি দাম বৃদ্ধির আশায় হিমঘরেই আলু রেখেছিলেন। কিন্তু আলুর দাম সে ভাবে না বাড়ায় উত্তরবঙ্গের হিমঘরগুলিতে আলু মজুত করে চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের বড় অংশ।
আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, উত্তরবঙ্গের হিমঘরে এখনও উৎপাদিত আলুর ৬০ শতাংশ আলু মজুত রয়েছে। এক মাসের মধ্যে নতুন আলু চাষ শুরু। আগামী প্রায় চার মাসের মধ্যে নতুন আলু বাজারে নামতে পারে। কিন্তু চার মাসে মজুত আলু উত্তরের বাজারে শেষ করা সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে। তাতে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষি এবং ব্যবসায়ীরা।
উত্তরবঙ্গের ৮৮টি আলু রাখার হিমঘর রয়েছে। জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে সংখ্যাটা বেশি। এ বছর হিমঘরে মোট সাড়ে ১৪ কোটি আলুর প্যাকেট মজুত ছিল। জুন থেকে অগস্ট মাসে হিমঘরে থাকা আলুর মাত্র ৪০ শতাংশ বাইরে এসেছে। বাকি ৬০ শতাংশ আলু আগামী চার মাসে উত্তরের মানুষ খেয়ে শেষ করতে পারবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। এতে আলুর দাম আরও কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাতে নতুন আলু চাষের উৎসাহ হারাতে পারেন চাষিদের অনেকে।
উত্তরবঙ্গ আলু বীজ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘গত বার ২৫ শতাংশ উৎপাদন বেশি হয়েছিল। দাম থাকায় বড় কৃষকদের অনেকেই হিমঘরে আলু রেখেছিলেন। প্রতিবেশী দেশ এবং ভিন্ রাজ্যে আলু কম পাঠানোর কারণেও মজুতের পরিমাণ বেড়েছে।’’
উত্তরবঙ্গের আলুর প্রধান ক্রেতা প্রতিবেশি রাজ্য অসম, বিহার, সিকিম। নেপাল এবং বাংলাদেশেও উত্তরের আলু রফতানি হত। কিন্তু এ বার অসম উত্তরপ্রদেশ থেকে আলু নিচ্ছে বলে দাবি। বিহারেও আলু চাষ ভাল হয়েছে। বাংলাদেশেও আলু যাওয়া বন্ধ। উল্টে, বাংলাদেশের আলু ভারতের পথ ধরে নেপালে রফতানি হচ্ছে। তাতে মার খাচ্ছে উত্তরবঙ্গের চাষ করা আলু।
উত্তরের আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, বাংলাদেশের আলু বেশি ভাল বলে নেপাল উত্তরবঙ্গের আলু নিতে চাইছে না। আর তাতেই হিমঘরে জমেছে আলুর বিশাল পরিমাণ। বাজারে কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও হিমঘরে ৭-৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি দফতরের উত্তরবঙ্গের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রত্যেক বার ফলনওকমবেশি হয়। তবে বাজারে দাম একেবারে কম নেই।’’