সরকারি আবাসের টাকা ঢুকেছে। কিন্তু লিন্টেলের (দরজা-জানালার উপর কংক্রিটের বিম) পর গাঁথনি এবং ঢালাই করার সাহস দেখাতে পারছেন না উপভোক্তারা। কারণ, নির্মাণ সামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া। তাই বাড়ি শেষ না করতে পারার চিন্তা রয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তিলপাড়া ব্যারাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘুরে আসতে হচ্ছে বলে ইমারতি দ্রবের দাম বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তাও আড়ালে মানছেন, আবাসের পাশাপাশি শৌচাগার তৈরির কাজ এবং রাস্তা সংস্কারের কাজের গতিও শ্লথ হয়েছে।
দুবরাজপুরের বালিজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মীরা মুখোপাধ্যায়, চিনপাই গ্রামের বাসিন্দা সোহাগি সূত্রধরেরা জানাচ্ছেন, প্রশাসনের চাপে কাজ শুরু করলেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না। তাঁরা বলছেন, ‘‘ভয় একটাই, হয়তো খরচে কুলিয়ে উঠতে পারব না।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘুরপথে আসতে হচ্ছে বলে ইট-বালির দাম ব্যাপক বেড়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে কালো পাথর। শুধু মীরা বা সোহাগি নন, একই সমস্যায় ভুগছেন দুবরাজপুর, সিউড়ি ১, রাজনগর-সহ নানা এলাকার অনেকে।
কেন্দ্রীয় সরকার আবাস উপভোক্তাদের টাকা দেয়নি বলে আবাস প্রাপকদের অ্যাকাউন্টে দুই কিস্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘোষণা মাফিক গত ডিসেম্বরে রাজ্যের ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে প্রথম কিস্তির টাকা দেয় রাজ্য সরকার। সেই তালিকায় ছিলেন বীরভূমের ৫২ হাজার ৫৮৫ জন উপভোক্তা। পরে মে মাসে যাঁরা লিন্টেল পর্যন্ত করে ফেলেছিলেন তেমন ৩৭ হাজার উপভোক্তা দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও পেয়েছেন।
উপভোক্তা এবং প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম থেকেই চড়া দামে বালি কিনতে হচ্ছিল। দাম পড়ছিল ট্র্যাক্টর প্রতি দুই থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা একান্তে জানাচ্ছেন, বর্ষা এবং পুলিশের নজরদারির জন্য বর্তমানে এক ট্র্যাক্টর বালিতে আড়াই হাজার এবং অতিরিক্ত বোঝাই হলে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে উপভোক্তাদের। ইটের দাম আট থেকে দশ হাজার।
দোসর হয়েছে কালো পাথরের দাম। ব্যবসায়ীর বলছেন, ‘‘ঘুরে ঘুরে আসতে হচ্ছে। রাস্তায় চাঁদার জুলুম রয়েছে। সব মিলিয়ে এক টন পাথরের দাম বেড়েছে গড়ে ১০০ টাকা।’’ উপভোক্তাদের প্রশ্ন, ‘‘এত দাম দিয়ে জিনিস কিনে কি এক লক্ষ ২০ হাজারে বাড়ি তৈরি সম্ভব?’’ উপভোক্তাদের আরও ক্ষোভ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বাড়ি তৈরির জন্য ৯০ দিনের মজুরি দিত। কেন্দ্র পুরোপুরি টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় সেটাও মিলছে না।’’
প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে জেলায় আরও ৪৫ হাজার শৌচাগার তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজও ইট-বালির দামের জন্য গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছে। ব্যাহত হয়েছে বর্ষায় বেহাল রাস্তার খানাখন্দ বুজিয়ে ফেলার কাজ। জানা গিয়েছে, বর্ষাকালে গ্রামীণ এলাকায় রাস্তা সংস্কারের জন্য যে স্টোন ডাস্ট বা কালো পাথরের গুঁড়ো ব্যবহার করত প্রশাসন, সেটার দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিডিওদের অনেকেও বলছেন, ‘‘তিলপাড়া জলাধারের রাস্তা বন্ধ। ফলে যে যে ব্লকগুলিতে ঘুর পথে আসতে হচ্ছে, সেখানেই সমস্যা। অন্য কিছু দিয়ে গর্ত ভরাট করলে টিকছে না।’’