যুদ্ধভূমি থেকে তালিবানি শাসন, দু’চাকায় দর্শন ‘হিন্দুস্তানি’ অক্ষয়ের
আনন্দবাজার | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পকেটের ভার খুব একটা নয়। সঙ্গী একটি মাত্র সাইকেল। তবে আসল পুঁজি উদ্যম এবং গোটা বিশ্ব দেখার স্বপ্ন। এই দুইয়ের জোরেই ন’মাস আগে বেরিয়ে পড়েছিলেন অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে বাঘমুণ্ডির বুড়দা গ্রামের ছেলে অক্ষয় ভগৎ। ন’মাসে ঘুরেছেন ১২টি দেশ। দেখেছেন তালিবানি শাসন, যুদ্ধের রাশিয়া, চিনের ঝাঁ চকচকে শহর-সহ আরও কত কী। সবই মূলত ওই দুই চাকার সাইকেলের উপরে ভর করে। সমাজমাধ্যমে সাড়া ফেলে দিয়েছে তাঁর বিদেশ ভ্রমণের গল্প।
জগৎ দেখতে গত নভেম্বরে ঘর ছেড়েছিলেন বছর ২৭-এর এই যুবক। অক্ষয় বলেন, “থাইল্যান্ড থেকে শুরু। তার পর থেকে সাইকেলের চাকা ছুঁয়েছে ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, চিন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তাজাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলির ভূমি।”
বিভুঁই ঘুরে সদ্য দেশে ফিরেছেন অক্ষয়। রবিবার কলকাতা থেকে জানালেন, “পকেট ফাঁকা।শরীরও আর টানছে না। এ বার তাই ফেরার পালা।” তবে তিনি সঙ্গে নিয়ে ফিরছেন অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতার দিস্তা।
ভাগ্য সাথ দিলে কখনও কখনও উড়ান বা কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা হত। তবে অক্ষয়ের যাত্রার বেশির ভাগটাই কেটেছে সাইকেলে। পেরিয়েছেন চিনের পাহাড়ি পথ। গোবি মরুভূমির হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় তাঁবুর এক-একটি রাতকে অনায়াসে দুঃসহ বলা চলে। অক্ষয়ের সঙ্গে রাত জাগত আকাশ ভরা নক্ষত্র।
বিপদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে অক্ষয় বলেন, “সাইবেরিয়াতে একদিন ভালুকের মুখোমুখি পড়েছিলাম। ভাগ্যিস কাছেপিঠে লোকজন ছিল। তাদের দেখে সে পালিয়ে যায়।”
যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাশিয়ায় গিয়ে খানিকটা অবাকই হয়েছিলেন অক্ষয়। সেখানকার মানুষের আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছে তাঁকে। যুবকের কথায়, “সে দেশে নিরাপত্তার কিছুটা কড়াকড়ি রয়েছে ঠিকই। তবে ভারতীয়দের প্রতি রাশিয়ার মানুষজন ভীষণই আন্তরিক দেখলাম।” প্রায় মাসখানেক তাঁদের মাঝেই ছিলেন অক্ষয়। চিন যে কতটা উন্নত, তা যুবকের কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেন, “চিন উন্নত প্রযুক্তির দেশ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। শহরগুলি একেবারে ঝাঁ চকচকে।ভারতীয়দের প্রতি সেখানকার লোকজনের কোনও বিদ্বেষ নেই বলেই মনে হল।”
তবে কাবুলিওয়ালাদের দেশে পা রেখে কিছুক্ষণের জন্য যেন থমকে গিয়েছিলেন। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে প্রায় সকলের কাঁধেই বন্দুক। বোরখার আড়ালে মহিলাদের মাপা চলাফেরা।যদিও ভারতীয় পরিচয় পাওয়ার পরে কাবুলে অক্ষয়ের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল তারাই। অক্ষয় বলেন, “আমাকে ওরা ‘হিন্দুস্তানি’ বলে ডাকত।”
এ দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্ব ভ্রমণের পরিবেশ রক্ষার বার্তা দেন যুবক। এর আগে সামাজিক প্রচারের স্বার্থে ভারত ঘুরেছেন।
ছেলের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় অক্ষয়ের মা। আশা ভগতের কণ্ঠে গর্ববোধের সঙ্গে দীর্ঘ বিচ্ছেদের কষ্টও। তিনি বলেন, “প্রায় এক বছর হতে চলল। ছেলেটা ঘরছাড়া। মন কেমন উতলা হয়ে উঠেছে।”
অক্ষয়কে অভিনন্দন জানিয়ে বিডিও (বাঘমুণ্ডি) আর্য তা বলেন, “প্রশাসনের তরফে তাঁকে সম্মানিত করা হবে।”