• ফিরছে চকলেট বোমাও! দেদার শব্দবাজি বিকিকিনির শঙ্কা
    আনন্দবাজার | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিয়ম মেনে একটি নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেইহল। পাশ করা নমুনার শংসাপত্রের জোরে এর পর কে, কী বানাচ্ছেন, দেখার নেই কেউই। সবুজ বাজিবলে দেদার নিষিদ্ধ বাজি তৈরি করা হলেও ধরার লোক কই? চলতি বছরে পুজোর আগে বাজি ঘিরে এই রাজ্যে এমনই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদবাজির শব্দের ঊর্ধ্বসীমা ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে দেওয়ায় আশঙ্কা আরও বেড়েছে। বাজি তৈরির জন্য বিখ্যাত এলাকাগুলিতে খোঁজ করে জানা গেল, নিষিদ্ধবাজির সঙ্গেই এ বার সেখানে দেদার তৈরি হচ্ছে চকলেট বোমা। যা বৈধ বলেই এক রকম ধরে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে পুজোর দিনগুলোয় শিশু, প্রবীণ, অসুস্থ মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিদের সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    যদিও এখনও প্রশাসনেরতরফে এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। ফলে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, এমন বাজির দাপটে শব্দ-শহিদের সংখ্যা বাড়বে না তো? পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর, মালদহের ইংরেজবাজার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ বা পাথরপ্রতিমার ঢোলারহাটের মতো বাজি তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে ঘটবে না তো?

    আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী,শুধু মাত্র সবুজ বাজি তৈরি ও বিক্রি করা যাবে। তা ফাটানো যাবেউৎসবের দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা।সবুজ বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ দেবে ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা নিরি। প্রশিক্ষণের পরে পরীক্ষায় পাশ করলে এলাকায় ফিরে বাজি তৈরি করা যাবে। ব্যবসায়ীদেরতৈরি ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি, তুবড়ির মতো প্রতিটি জিনিস আলাদা আলাদা করে পরীক্ষার জন্য নিরি-র দফতরে পাঠাতে হয় প্রতি বছর। এক একটি বাজি পাশ করলে প্রতিটিরজন্য আলাদা আলাদা করে শংসাপত্র দেবে নিরি। সেটাই কিউআর কোড হিসাবে বাজির বাক্সের গায়ে ছাপা থাকবে। এই কোডের উপরে সিএসআইআর এবং নিরি-র লোগো থাকবে। নিরি-র নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে স্ক্যান করলে তবেই প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং কোন কোন উপাদান দিয়ে বাজিটি তৈরি হয়েছে, তা জানা যাবে। নিরি-র প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা রাইলু অতীতে কলকাতায় বাজি প্রস্তুতকারীদের কর্মশালায় বলে গিয়েছিলেন, ‘‘আমাদের কিউআর কোড এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড। অর্থাৎ, সুরক্ষিত। বাকি সবই জাল করা সম্ভব।’’ কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে চলতি বছর থেকে নিরি বাজি পরীক্ষা করে আর কিউআর কোড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়। প্রশ্ন উঠছে, বাজি ধরে ধরে পরীক্ষার পরে কিউআর কোড না দিলে নকল বাজি ধরা পড়বে কী করে?

    বাজি প্রস্তুতকারীদের একাংশের দাবি, গত বছর থেকেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এতে নিষিদ্ধ বাজিতে ছেয়ে গিয়েছিল বাজার। এমনকি, পুজোর আগে বেহালা, কালিকাপুর, টালা এবং ময়দান বাজি বাজারে রাজ্যের যে ক’টি সংস্থা অতীতে নিরি থেকে বাজি তৈরির শংসাপত্র পেয়েছে, তাদের নামের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শংসাপত্র পেয়ে ওই বাজি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি যে সেই নিয়ম মেনেই কাজ করছে, তাদেখার কার্যত কোনও ব্যবস্থাই ছিল না বলে অভিযোগ।

    এ ব্যাপারে কথা বলতে ফোন করা হলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাইরে আছি। ব্যস্ত আছি।’’ কলকাতা পুলিশের বাজি সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিজার্ভ ফোর্সের পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘বাজি পরীক্ষা করে দেখার পরিকাঠামো পুলিশের নেই। নিরি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেই এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে। কোনটা নিষিদ্ধ আর কোনটা সবুজ বাজি, তার পার্থক্য করতে গিয়ে তো আমরাও সমস্যায় পড়ছি।" নিরি-র প্রধান বিজ্ঞানী আর জে ক্রুপাদাম বললেন, ‘‘পরীক্ষায়পাশ করা বাজি প্রস্তুতকারী সংস্থার নামের তালিকাও জাল করা হচ্ছে। তাই আমাদের ওয়েবসাইটে নামের তালিকা রয়েছে। কিউআর কোড-ও প্রচুর জাল করা হচ্ছিল। এই বিষয়টিতে রাজ্য প্রশাসনকেই কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)