তিনটি মেট্রোপথ জুড়ে যাওয়ার ফলে যাত্রী সংখ্যা অকস্মাৎ বহু গুণ বেড়ে যাওয়ায় পরিষেবা দিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে, শুধু যাত্রী-সংখ্যার এই বৃদ্ধি কিংবা পর্যাপ্ত রেকের অভাবই যে পরিষেবায় ভোগান্তির একমাত্র কারণ, তা মনে করছেন না মেট্রোর আধিকারিকদের বড় অংশ। তাঁদের মতে, চালকের অভাবও সমস্যাকে প্রকট করে তুলেছে।
চালকের অভাব সামাল দিতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় বহু দিন ধরেই ট্রেনের পিছনে গার্ডের কামরা খালি থাকে। এক জন করে চালকের ভরসায় ট্রেন চালিয়েও ওই মেট্রোয় চালকের অভাব মেটানো যায়নি। র্বতমানে চালু থাকা ব্যবস্থায় পরিষেবা দেওয়ার জন্য অন্তত ৬০ জন চালকের প্রয়োজন থাকলেও ৪৫ জন চালক দিয়ে পরিষেবা সামাল দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই মেট্রোয় উন্নত প্রযুক্তির সিগন্যালিং ব্যবস্থা ব্যবহারের কথা বলে ট্রেন অপারেটর রাখতে চেয়েছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোপথে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে চালকবিহীন ব্যবস্থায় ট্রেন চালানোর কথা থাকলেও এখনও ওই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়নি। বরং, ওই ব্যবস্থার বদলে এক ধাপ পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। চালু থাকা ওই ব্যবস্থায় চালকের ভূমিকা গৌণ নয়। কলকাতা মেট্রোয় চালকের দায়িত্ব সামলানোর জন্য অনুমোদিত পদ রয়েছে ৫০৭টি। সেই জায়গায় চালক রয়েছেন ২৬০ জনের কাছাকাছি। যা কার্যত অর্ধেক।
এত কম চালক দিয়ে পরিষেবা সামলাতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কলকাতা মেট্রোর স্বীকৃত বাম সংগঠনের নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, এর ফলে চালকদের বিশ্রামেব্যাঘাত ঘটছে।
চালকের সঙ্কট মেটাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ অন্যান্য রেল থেকে চালক আনার কথা বলেছিলেন। বাস্তবে দক্ষিণ-পূর্ব রেল থেকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ২৫ জনের কাছাকাছি সহকারী চালক বা অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট পেয়েছেন। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট সহকারী চালকেরা এখনও মালগাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে ট্রেন চালানোর অনুমতি পাননি। ফলে, মেট্রোয় যাত্রিবাহী ট্রেনের হাল ধরতে তাঁদের আরও অনেক দিন লাগবে বলে খবর। ওই চালকেরা মূলত বিভিন্ন ট্রেনে গার্ডের কাজ করছেন। এ ছাড়াও, কিছু টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা কারিগরি সহায়কদের ওই কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মেট্রো সূত্রের খবর, উত্তর-দক্ষিণ এবং নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর মেট্রোর বহু ট্রেনে সহকারী চালক ও কারিগরি সহায়কেরা গার্ডের কাজ করছেন। ট্রেনপ্রান্তিক স্টেশনে পৌঁছলে ওই কর্মীরা বিপরীত দিক থেকে ট্রেন চালানোর ভার নিতে পারছেন না। তাঁদের ফের অন্য ট্রেনে যেতে হচ্ছে। এ ভাবে চালক এবং গার্ড বদলের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় মেট্রোর পরিষেবায় বিলম্ব ঘটছে।
সেই সঙ্গে, চালক থেকে গার্ড সকলের ক্ষেত্রেই দায়িত্ব বণ্টন নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র কর্মী-সঙ্কটের মধ্যে কাকে, কোথায় পাঠানো হচ্ছে, বহু ক্ষেত্রে সেই খোঁজ করতে গিয়েও সময় লাগছে। যার ফল, মেট্রো পরিষেবায় অযথা দেরি। কোনও একটি মেট্রো টালিগঞ্জ, নোয়াপাড়া, দক্ষিণেশ্বর কিংবা শহিদ ক্ষুদিরামের মতো প্রান্তিক স্টেশনে পৌঁছনোর পরে নতুন করে ওই ট্রেনের দায়িত্ব বদল করতে গিয়ে সময় লাগছে। তাতে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।
পরিণামে ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রা শুরু করতে গিয়ে প্রথমেই দেরির মুখে পড়ছে। পরে ওই দেরি আরও বাড়ছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময়ে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছেন, কর্মীর ব্যবস্থা হয়ে যাবে। পরিষেবা নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু কবে কর্মীর ঘাটতি মিটবে, তার সদুত্তর মেলেনি।