• আমি শুধুই নচিকেতার হয়ে থাকব, শুধুই ওঁর গান গাইব, এ রকম উনি কোনও দিন চাননি!
    আনন্দবাজার | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নচিকেতা চক্রবর্তী, আমার দেখা অহং-হীন এক খ্যাতনামী। আমি ওঁর আবিষ্কার। তাই আমার উপর ওঁর অধিকারবোধ থাকাটাই স্বাভাবিক। উনি কিন্তু তেমন নন। একমাত্র নচিদাকেই দেখলাম, যিনি কারও থেকে কিচ্ছু আশা করেন না। আমার থেকেও কোনও দিন কিছুই আশা করেননি। এমনকি, দিনের পর দিন আমাদের মধ্যে যোগাযোগ না থাকলেও। আজ ওঁর জন্মদিন। সারা দিন মহড়ায় ব্যস্ত থাকব। ফলে, শুভেচ্ছা জানাতে যেতে পারব না হয়তো। তবু দাদা কিন্তু ভুল বুঝবেন না আমায়!

    এর পরেও আমাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্মান অটুট থাকবে। বহু বছর ধরে নচিকেতা চক্রবর্তীর এই উদার মানসিকতার সাক্ষী আমি।

    দাদার কাছে একটা সময়ের পর আমার যাতায়াত কমে গিয়েছে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তা-ই নিয়ে একদিন দুঃখপ্রকাশও করেছিলাম, দাদা আগে কত আসতাম। তখন আমার গানবাজনার প্রয়োজন ছিল নিশ্চয়ই। এখন নিশ্চয়ই স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি। তাই আর আপনার কাছে আসা হয় না আগের মতো। দাদা বলেছিলেন, “আমি তো এটাই চেয়েছিলাম রে! তুই এত সময় কম পাবি, এত ব্যস্ত হয়ে যাবি যে, আমার কাছেও তোকে যেন আসতে না হয়!”

    এখানেই শেষ নয়। ‘সাঁঝবেলার গান’-এর অ্যালবাম যখন শ্রোতাদের ভাল লাগল, তখন নচিদা বললেন, “আমার কাছে খবর আছে, তোকে নিয়ে অনেক গীতিকার, সুরকার কাজ করতে চান। তুই শুধু আমার হয়ে, আমার কাছে আটকে থাকিস না। এ বার নিজেকে মেলে দে।” ওঁর যুক্তি ছিল, “শুধু যদি আমার তৈরি করা গানই করিস, তা হলে এমনও একটা দিন আসতে পারে, আমি হয়তো ভাল গান তৈরি করতে পারছি না। তখন অন্য গীতিকার, সুরকারদের কাছে গেলে তোকে শুনতে হবে, এত দিন তাঁদের পাত্তা দিসনি। আমি পারছি না বলে, এখন তুই ওঁদের কাছে গিয়েছিস। তোকে দিয়ে আর কেউ কাজ করাবে না রে মা!”

    আমাকে বরাবর ‘মা’ সম্বোধন করেছেন। আশ্বস্তও করেছিলেন, পরে আবার আমায় নিয়ে অ্যালবাম বানাবেন। নচিদা কথা রেখেছিলেন।

    নচিদার আরও একটা গুণ, চিরকাল আমার গান নিয়ে ভেবেছেন, কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানলেও, কোনও দিন প্রশ্ন করেননি। আগ্রহও প্রকাশ করেননি। বরং আগলে রেখেছেন আমাকে। আমার ব্যক্তিগত জীবনকেও। আমাদের মধ্যে গানের বাইরে তাই আজও আর কিচ্ছু নেই। আমি তো জানি, স্নেহমিশ্রিত এই শাসন না থাকলে কোনও দিন এই শুভমিতা, ‘গায়িকা শুভমিতা’ হয়ে উঠতে পারত না। জানি, অনেকে সে সব নিয়ে অনেক ভুল কথা বলেছেন, ছড়িয়েছেনও। আমার কিচ্ছু যায় আসে না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)