খুনের আগে এলাকার ঘুরে গিয়েছিল দেশরাজ, নেপালে পালানোর জন্য বানিয়েছিল ভুয়ো আধার কার্ড, শেষমুহূর্তে গ্রেপ্তার ...
আজকাল | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: নদিয়ার কৃষ্ণনগরের কলেজ ছাত্রী ঈশিতা মল্লিক খুনের ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। পুলিশের জালে ধরা পড়ার পর মূল অভিযুক্ত দেশরাজ সিং নিজেই স্বীকার করেছে, খুনের পেছনে ছিল সম্পর্কভিত্তিক টানাপোড়েন ও প্রতিহিংসা। শুধু তাই নয়, খুনের পরিকল্পনা সে অনেক আগেই করে রেখেছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।
পুলিশি জেরায় দেশরাজ জানায়, খুনের কয়েকদিন আগে থেকেই সে কৃষ্ণনগরের মানিকপাড়ার আশপাশে রেইকি (পর্যবেক্ষণ) করে বেড়ায়। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে একটি ছবি দিয়ে ‘Coming Soon’ লিখে পোস্টও করেছিল সে—যা এখন ভাবলে গা শিউরে ওঠে।
সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে জানান, বহুদিন ধরেই উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় বসবাস করছিল দেশরাজ। খুনের পর সেখান থেকেই ট্রেনে চড়ে পালায় সে। প্রথমে নৈহাটি থেকে দুন এক্সপ্রেস ধরে সে পাড়ি দেয় উত্তর ভারতের দিকে।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তৎপর হয়। একের পর এক ট্রেনে তল্লাশি চালানো হয়—দুর্গাপুর, আসানসোল, উত্তরপ্রদেশগামী ট্রেনে। প্রথমদিকে কোনও সুরাহা মেলেনি। পরে দেশরাজের পারিবারিক সূত্র ধরে জানা যায়, সে গুজরাটের জামনগরের এক আত্মীয়ের কাছে আশ্রয় নিয়েছে।
পুলিশ সেই আত্মীয় কুলদীপ সিংকে গ্রেফতার করে। জেরায় উঠে আসে দেশরাজের সম্ভাব্য গন্তব্য—নেপাল। ইতিমধ্যেই সে ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করে ফেলেছিল আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হওয়ার জন্য। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
রবিবার বিকেলে নেপাল সীমান্ত পার হওয়ার আগের মুহূর্তে সাদা পোশাকে ও গোয়েন্দা পোশাকে মোতায়েন থাকা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, 'দেশরাজ অনেক আগে থেকেই এই খুনের পরিকল্পনা করছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া স্ট্যাটাস, আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড়, পালানোর রুট—সবই তার পরিকল্পনার অংশ। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যাবে খুনের আরও কারণ। ঘটনার দিন ইশিতার মাথায় তিনটি গুলি করে পালানোর সময় ঈশিতার মা চলে আসায় তাঁর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করবার পরিকল্পনা করলেও সেটি ব্যর্থ হয়। আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে এল, তা জানা হবে।'
এই খুনকাণ্ড ঘিরে এখন উত্তাল কৃষ্ণনগর। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত বিচার ও কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ঈশিতার পরিবারের কান্নায় ভারী গোটা মানিকপাড়া এলাকা।