রাজ্য সরকারের উদ্যোগে লোকশিল্পের প্রসার ঘটাতে অভিনব কর্মশালা...
আজকাল | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মিল্টন সেন,হুগলী,১ সেপ্টেম্বর: লোকশিল্পের প্রসার ঘটাতে রায়বেঁশে ঘরানা নিয়ে কর্মশালা শুরু হল চুঁচুড়ায়। হুগলি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সহযোগিতায় এবং লোক সংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের আয়োজনে শুরু হল কর্মশালা। সোমবার চুঁচুড়া রবীন্দ্রভবনে লোকশিল্পীদের নিয়ে এই কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক সাধারন তরুণ ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন চুঁচুড়ার পুরপ্রধান অমিত রায়, হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখার্জী, নির্মাল্য চক্রবর্তী, হুগলি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক প্রবাল বসাক। তিনদিন ব্যাপী চলবে লোকশিল্পীদের রায়বেঁশে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ দেবেন মুর্শিদাবাদের শিল্পী আবু সালেহ এবং বীরভূমের শিল্পী রক্ষাকর প্রামানিক।
এই প্রসঙ্গে হুগলি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক প্রবাল বসাক বলেন, প্রতি বছর লোক শিল্পীদের এক একটা আঙ্গিকের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তেমনই এবছর রায়বেঁশে ঘরানার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল লোক শিল্পের এই আঙ্গিকের প্রসার ঘটানো।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন ঘরানা রয়েছে। এই কর্মশালার মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার ঘরানাগুলোই আদান-প্রদানের মাধ্যমে লোকো শিল্পীদের মধ্যে আরও প্রসার ঘটানোই মূল লক্ষ্য। লোকশিল্পী উপেন্দ্রনাথ কোল্লা বলেন, রায়বেঁশে হচ্ছে এক মাটির শিল্প। এই কর্মশালার মধ্যে দিয়ে নতুন অনেক কিছু শেখা যাবে। সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বিষয়ে লোকশিল্পীদের নিয়ে নানান কর্মশালা আয়োজিত হয়ে থাকে। এই কর্মশালার মাধ্যমে খুব উপকৃত হবেন লোকশিল্পীরা।
প্রসঙ্গত, লোকশিল্প, লোকসংস্কৃতি এবং লোকসশিল্পীদের উপর বরাবর নজর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। নানা সময়ে শিল্পীদের জন্য নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। লোক শিল্পীদের পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সবসময় গুরুত্ব দেন, অতীতে বারে বারে প্রমাণিত হয়েছে তা। নানা সময়ে নানা জেলায় জেলাভিত্তিক লোকশিল্পদের সম্মেলন হয়েছে। তালিকা পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়া।
চলতি বছরেই হুগলি জেলার পাঁচ শতাধিক লোকশিল্পীদের নিয়ে চুঁচুড়া রবীন্দ্র ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেলার লোকশিল্পী সম্মেলন। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন জেলার নানা জায়গার বাউল, ভাটিয়ালি, তরজাগান ইত্যাদি বিভিন্ন ঘরানার কণ্ঠশিল্পীরা। সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকিরা। উপস্থিত ছিলেন পুরুষ ঢাকি, মহিলা ঢাকি। এছাড়াও রবীন্দ্র ভবনে এদিন উপস্থিত হন আদিবাসী সংস্কৃতির নৃত্য, রণপা, রায়বেঁশে, শ্রীখোলবাদন ইত্যাদি ঘরানার লোকশিল্পীরাও। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, অনুষ্ঠান চলে দিনভর।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলাস্তরের আধিকারিকেরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্রীমতী তামিল এস ওভাইয়া আইএসএস, চন্দননগর পৌরনিগমের মেয়র শ্রী রাম চক্রবর্তী, হুগলি জেলা পরিষদের মাননীয় সভাধিপতি শ্রী রঞ্জন ধাড়া, মাননীয় মেন্টর ও কর্মাধ্যক্ষ : শিক্ষা -সংস্কৃতি - তথ্য ও ক্রীড়া স্থায়ী সমিতি ড. সুবীর মুখোপাধ্যায়, মাননীয় কর্মাধ্যক্ষ : বন ও ভূমি সংস্কার স্থায়ী সমিতি এবং প্রাক্তন বিধায়ক শ্রী অসীম মাঝি, মাননীয় কর্মাধ্যক্ষ : পূর্তকার্য ও পরিবহন স্থায়ী সমিতি শ্রী বিজন বেসরা, মাননীয়া সদস্যা শ্রীমতী দীপ্তি ভট্টাচার্য, হুগলি চুঁচুড়া পৌরসভার পৌরপ্রধান শ্রী অমিত রায়, মহকুমাশাসক হুগলি - চুঁচড়া সদর শ্রীমতী স্মিতা সান্যাল শুক্লা ও অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পরিকল্পিত জনমুখী প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলাস্তরের আধিকারিরা লোকশিল্পীদের সামনে আলোচনা করেন। জেলা পরিষদের মাননীয় কর্মাধ্যক্ষ শ্রী বিজন বেসরা, সাঁওতালি ভাষায় রাজ্য সরকারের বিস্তৃত উন্নয়ন কর্মসূচী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। লোকশিল্পীরা একাধিক লোকসঙ্গীত পরিবেশনা করেন সম্মেলনে। উল্লেখ্যযোগ্যভাবে তাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, জয় জোহার, তফশিলি বন্ধু, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, ডেঙ্গু রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রচিত লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন।