৪৫তম বর্ষে অভিনব ভাবনা! বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস নিয়ে হাজির অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাব
প্রতিদিন | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালি আক্রান্ত হওয়ার খবর শিরোনামে। রাজ্যের বাইরে বাংলায় কথা বললেই বাঙালিকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাঙালি জ্যাত্যাভিমানের প্রতি নেমে আসা এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে বহু আগেই রুখে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। বাঙালির প্রতি এই বিদ্বেষ ও অতাচারের প্রতি তাঁর কড়া অবস্থান ভরসা যুগিয়েছে আপামর বাংলাকে। তাঁর সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন দেশ ও দশের প্রতিটা বাঙালি।
এমন এক আবহে বাগুইআটি অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল এবারে পুজো থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাংলা, বাঙালি এবং বাংলা ভাষাকে। এবারে তাদের প্রতিপাদ্য হল ‘গর্বের বাংলা ও বাঙালি। সমৃদ্ধির আদ্যোপান্ত।’ এ বছর তাদের পুজো পা রাখতে চলেছে ৪৫ বছরে। বন্ধুমহলের পুজোয় প্রাধান্য পাবে বাংলা ভাষার ব্যুৎপত্তি এবং ঐতিহ্য। রীতিমতো গবেষণা করে বন্ধুমহল এ কাজ করছেন। এখানে পুজো দেখতে এসে আপনি যেমন আপনার মাতৃভাষা সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য খুঁজে পাবেন, জানতে পারবেন এ ভাষার উৎস কাহিনি, ঠিক তেমনই মহামায়া শক্তির অপূর্ব রূপ আপনাকে আকর্ষণ করবে। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। একই সঙ্গে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। এই দুই বিষয়কে মেলাতেই বন্ধুমহলের এই বিরাট আয়োজন।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময় ক্লাবের সেক্রেটারি শ্রী স্বরূপ নাগ জানান, “এ বছরের যে চমক আপনারা অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবে দেখতে পাবেন, সেটা হচ্ছে সিলিকনের কথা বলা পুতুল। কলকাতার কোনও পুজোতে আপনারা আজ পর্যন্ত এই চমক দেখতে পাবেন না। তাই সেটা দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের দুর্গাপুজোতে।”
পৃথিবীর মোট যতগুলো ভাষা, সেগুলোকে কমবেশি ৭ ভাগে ভাগ করা যায়। ইন্দো ইউরোপীয়, হামিও, বান্টু, সেমিও, দ্রাবিড়, অস্ট্রিক, এস্কিমো। এর মধ্যে বাংলার জন্ম ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা থেকে। খাদ্য এবং বাসস্থান ক্রমাগত পরিবর্তন করতে করতে শেষ পর্যন্ত ইন্দো ইউরোপীয় গোষ্ঠীর একাংশের মানুষ এসে পৌঁছন নদী মাতৃক বাংলায়। মতান্তরে এই পদার্পণ ২৫ থেকে ৪২ হাজার বৎসর পূর্বের। আবার নিগ্রিড গোষ্ঠীর মানুষ, যারা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে ভারতে প্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছন এই বাংলায়, তাদের মেয়াদকাল ধরলে বাংলা ভাষা প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ বলে কোনও কোনও গবেষক দাবি করেন।
“মণ্ডপ পরিকল্পনাতে রয়েছে নানা ধরনের অভিনব সব ভাবনা। আর এই ভাবনাকে আর্ট ফর্মে তুলে ধরতে আয়রন, প্লাই, ফাইবার, সিলিকন চার ধরনের জিনিস মণ্ডপ পরিসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে।” জানালেন স্বরূপ নাগ।
আসলে পুজো এখন শুধুই প্যান্ডেল হপিং, গেট টুগেদার বা ভুঁড়িভোজ নয়। বাঙালির প্রাণের উৎসব এখন বিদেশের দরবারে বন্দিত এবং প্রশংসিত। তাই পুজোর থিম ভাবনা এখন আস্ত থিসিস পেপার। তবে বন্ধুমহল কথা দিয়েছে, ভিতরে যতই গবেষণা এবং তত্ব কথা লুকিয়ে থাকুক না কেন, এই পুজো দর্শকদের প্রানের পুজোর শিউলি পরশ দিতে তৈরি। একই সঙ্গে বাঙালি, বাংলা ও বাংলা ভাষার উপর নেমে আসা অভব্যতার বিরুদ্ধে এ এক তীব্র প্রতিবাদও বটে।