• পুজোর মুখে ‘স্বনির্ভর’ হওয়ার সুযোগ! পড়ুয়াদের জন্য বড় উদ্যোগ বালুরঘাটের ডেকোরেটারদের
    প্রতিদিন | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রাজা দাস: পুজো মানেই এক অদ্ভুত আনন্দ। শুধু কি ঘোরা আর খাওয়া-দাওয়া? পুজোয় প্রিয়জনকে কিছু উপহার দিতেও মন চায়। নিজের টাকায় উপহার কিনে দেওয়ার আনন্দই আলাদা। কিন্তু অনেকের কাছেই সেই সুযোগ থাকে না। বিশেষ করে যাঁরা কলেজ পড়ুয়া, তাঁদের হাতে কোথায় টাকা? এবার পুজোয় তাঁদের কথা ভাবলেন জেলার বেশ কয়েকজন ডেকোরেটার্স। তাঁদের কাজে এলাকার গৃহবধূদের সঙ্গে হাত লাগালেন একদল পড়ুয়াও। তাঁদের সাবলীল ভাবনাকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজন।

    দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহরে একদল ছাত্রী বিশেষ এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সদর শহর বালুরঘাটে রয়েছে কয়েকটি নামকরা ডেকোরেটর। তারাই সাধারণত জেলার হিলি, বালুরঘাট, গঙ্গারামপুরের মতো এলাকায় বড় বড় মণ্ডপ তৈরির কাজ করে। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ও কলকাতাতেও মণ্ডপ তৈরির দায়িত্ব এই সমস্ত ডেকরেটারদের কাঁধে চাপে।

    গত বছর বালুরঘাটের “ডেকোরেটর ভাই” এর কর্মকর্তা তথা শিল্পী রাজ নারায়ণ সাহা চৌধুরী (ভাই) ডাক পেয়েছিলেন কলকাতায়। খোদ কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের পাড়া ‘মিলন সংঘে’র মণ্ডপ তৈরিতে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর তৈরি মণ্ডপ তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। পেয়েছিলেন পুরস্কারও। বালুরঘাটের সেই “ডেকোরেটর ভাই” এর ওয়ার্কশপে সাজসজ্জার কাজ মূলত করে থাকেন মহিলারা। বলা ভালো, এলাকার গৃহবধূরা এই কাজে অংশ নেন। শুধু ‘ডেকোরেটর ভাই’য়ের ওয়ার্কশপেই নয়, অন্যান্য ওয়ার্কশপেও কাজ করেন মহিলারা। এবার সেই সমস্ত ওয়ার্কশপে সামিল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরাও।

    পুজোর মরশুমে ওয়ার্কশপগুলিতে গৃহবধূদের সঙ্গে শতাধিক ছাত্রী এবার সূক্ষ্ম হাতের কাজ করে চলেছেন। অভিজ্ঞ বা প্রধান শিল্পীর নির্দেশনায় কাজ করে চলেছে তাঁরা৷ চলছে থার্মোকল, রঙিন পেপার, ভেলভেট কাপড়, হরেক রঙের কাগজ, আঠা, চুমকি, পুঁতি, ফলের বীজ, কাচের টুকরো, বিভিন্ন ধরনের শুকনো পাতা, মশলা দিয়ে কাজ। এসব দিয়েই বানানো হচ্ছে পাখি, গাছ, ফুল, পাতা বা অনান্য নকশা তৈরির কাজ। সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ঘরে বসে আবার কখনও ওয়ার্কশপে গিয়ে এই কাজ করে চলেছেন তাঁরা। উৎসাহের কোনও খামতি নেই।

    নাম জানাতে অনিচ্ছুক কলেজ পড়ুয়া শিল্পীরা জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি মাস তিনেক ধরে এই কাজ করছেন তাঁরা। কখনও দিনের হিসেবে, কখনও ঘণ্টার চুক্তিতে টাকা পাচ্ছেন তাঁরা। কাজ শেষে অন্তত ১৮-২০ হাজার টাকা আয় হবে বলেই আশা পড়ুয়াদের। তাঁদের আশা এতে পুজোর খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও সাহায্য করতে পারবেন তাঁরা।

    অন্যদিকে “ডেকোরেটার ভাই” এর কর্ণধার রাজ নারায়ণ সাহা চৌধুরী বলেন, ”ঘরে বসে নকশা তৈরির কাজে অনেক ধৈর্য্যর প্রয়োজন। এই কাজের ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ধৈর্য অনেকটা বেশি। এছাড়া সূক্ষ্ম হাতের কাজগুলি তাঁরাই ভালো করেন।” সর্বোপরি মহিলাদের স্বনির্ভরতা প্রদানই যে তাদের উদ্দেশ্য সেটাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। রাজ নারায়ণের কথায়, এসব বিবেচনা করে মহিলাদের প্রাধান্য দেওয়া হয় নকশা তৈরির কাজে। সারা বছর তাঁর কাছে অন্তত ২০ জন মহিলা এই কাজ করেন। পূজার মরশুমে অন্তত ১৫০ জনকে তিনি কাজের সুযোগ করে দিতে পারেন।

    এবার ৭ টি মণ্ডপের বরাত পেয়েছে “ডেকোরেটর ভাই”। ফলে পুজোর মুখে প্রবল কাজের চাপ। ফলে এই কাজে রাজ নারায়ণ সাহা চৌধুরী ওয়ার্কশপে রয়েছেন বহু সংখ্যক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরাও। এখানে ছাত্রীরা তাঁদের সুবিধামতো কাজ করছেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)