• রাহুলের পরের নিশানা কি মোদীর বারাণসী? অ্যাটমের পরে ভোটচুরির হাইড্রোজেন বোমা ফাটানোর হুঁশিয়ারি
    এই সময় | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অগস্টের শুরুতে লোকসভার বাইরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেছিলেন, অ্যাটম বোমা ফাটাতে চলেছেন তিনি। ৭ অগস্ট ফেলেছিলেন সেই বোমা। কর্নাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি তুলে ধরে ‘ভোটচুরি’র গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। অ্যাটম বোমায় যেমন চেইন রিঅ্যাকশন হয়, বর্তমানে দেশজুড়ে ভোটচুরির সেই রকমই চেইন রিঅ্যাকশন দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন বা BJP, কেউই রাহুলের তোলা প্রশ্নগুলির সদুত্তর দিতে পারেনি। সোমবার বিহারে ১৬ দিনের ভোট অধিকার যাত্রার শেষ দিনে, পাটনার জনসভা থেকে হাইড্রোজেন বোমা ফেলার হুঁশিয়ারি দিলেন রাহুল।

    এ দিন পাটনায় বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভা এলাকায় ভোটার তালিকায় জালিয়াতি নিয়ে তাঁর অভিযোগকে তিনি ফের ‘পরমাণু বোমা’ বলে উল্লেখ করেন। এর পরেই তিনি হাইড্রোজেন বোমা ফেলার হুঁশিয়ারি দেন।

    তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন পারমাণবিক বোমার চেয়ে বড় কী? হাইড্রোজেন বোমা। BJP তৈরি থাক। হাইড্রোজেন বোমা আসছে।’

    হাইড্রোজেন বোমা বলতে কীসের কথা বললেন তিনি? সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলেননি রাহুল। তবে মনে করা হচ্ছে, মহাদেবপুরায় ভোটচুরির অভিযোগ করার পরে এ বার রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের পরবর্তী নিশানা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদী। বলা ভালো তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এ বার বারাণসীর ভোটার তালিকা ধরে মহাদেবপুরার মতোই তথ্য দিয়ে ভোটচুরি ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে কংগ্রেস।

    প্রথমত এ দিন তাঁর বক্তৃতাতেই তার ইঙ্গিত দিয়েছেন রাহুল। তিনি বলেছেন, ‘হাইড্রোজেন বোমা পড়লে, জনগণের সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না নরেন্দ্র মোদী।’

    দ্বিতীয়ত ভোট অধিকার যাত্রা চলাকালীন রাহুল এক জনসভায় জানিয়েছিলেন, এর পরে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র — এক এক করে সব জায়গার ভোটচুরি তাঁরা গোটা দেশের সামনে তুলে ধরবেন। তিনি এই কথা বলার সময়ে জনতার মধ্য থেকেই গর্জন শোনা গিয়েছিল ‘বারাণসী’। অর্থাৎ, বারাণসীর ভোটচুরির খতিয়ান দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল জনতা। জবাবে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে হেসেছিলেন রাহুল গান্ধী।

    তৃতীয়ত, অজয় রাইয়ের অনুপস্থিতি। বিহারে ভোট অধিকার যাত্রায় কংগ্রেসের অনেক নেতানেত্রীকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা ২০২৪ সালের লোকসভায় বারাণসী কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বী অজয় রাইকে দেখা যায়নি। বস্তুত, সংবাদমাধ্যমের সামনেও খুব একটা আসছেন না তিনি। এর থেকে মনে করা হচ্ছে তাঁর নেতৃত্বেই বারাণসী কেন্দ্রেও ‘ভোটচুরি’ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস।

    বারাণসী কেন্দ্রে প্রাথমিক কয়েক রাউন্ডের গণনায় নরেন্দ্র মোদীকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন অজয় রাই। প্রথম তিন রাউন্ডের গণনার পরে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ৬,০০০ এরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন তিনি।

    তবে গণনা এগোতে শুরু করলে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলের বুথগুলিতে গণনা শুরু হওযার পরে ধীরে ধীরে ব্যবধান কমাতে শুরু করেছিলেন মোদী। বিকেলের দিকে অজয় রাইকে ছাড়িয়ে যান মোদী এবং ধীরে ধীরে ব্যবধান বাড়াতে থাকেন।

    শেষ পর্যন্ত মাত্র ১,৫২,৫১৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন মোদী।

    ফলপ্রকাশের পর থেকেই ভোটের ফল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অজয় রাই। নরেন্দ্র মোদীর জয় ‘ভোট চুরি’ এবং কারচুপির ফল বলে দাবি করেছিলেন তিনি। রাহুল গান্ধীর ভোটচুরির দাবির অনেক আগে।

    ভোটার তালিকায় নকল নাম এবং জাল ভোটার ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, একটি মন্দিরের ঠিকানায় ৫০ জনেরও বেশি ভোটার নিবন্ধন করা হয়েছে। প্রত্যেকেরই বাবা হিসেবে এক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই দেখানো হয়েছে।

    ভোট গণনার দিনও কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে অজয় রাইয়ের। কেন বিরোধীদের ডিজিটাল ভোটার তালিকা দেওয়া হয়নি, প্রশ্ন করেছেন তিনি। গণনার দিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে গণনাকেন্দ্র থেকে সংবাদমাধ্যমকেও ‘সরিয়ে দেওয়া’ হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

    তবে এই সকল অভিযোগ নিয়ে কোনও আইনি পদক্ষেপ করেননি তিনি, নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হননি।

    রাহুল গান্ধী হাইড্রোজেন বোমা ফেলার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরে মনে করা হচ্ছে, মহাদেবপুরার মতো বারাণসীতেও ভোটচুরির ‘পোক্ত প্রমাণ’ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। তা হাতে এলে তবেই বোমাটি ফাটানো হবে।

    ৭ অগস্ট রাহুল গান্ধী তথ্যপ্রমাণ দিয়ে ভোটচুরির অভিযোগ করার পর থেকে ব্যাকফুটে বিজেপি। রাহুলের অভিযোগের কোনও উত্তর তারা দিতে পারেনি। উল্টে অনুরাগ ঠাকুরও ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

    এ দিন রাহুল গান্ধীর হাইড্রোজেন বোমা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাটনার বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, “তিনি যাকে পরমাণু বোমা বলেছিলেন, তা এখন বোকামিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের সঙ্গে পরমাণু বোমা এবং হাইড্রোজেন বোমার কী সম্পর্ক? লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর আচরণ ভালো হওয়া উচিত। ভোটার তালিকায় ২১ লক্ষেরও বেশি মৃত ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছে। তারা কি এখনও সেখানেই থেকে যাবে? রাহুল গান্ধীকে এর জবাব দিতে হবে। কেন তিনি হলফনামা জমা দিচ্ছেন না? তিনি জানেন, তিনি যদি মিথ্যা বলেন, তা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)