• ‘যে মাথায় টুপি পরাতে জানে, সেই সেরা নেতা!’ পরোক্ষে কি মোদিকেই বিঁধলেন গডকরি? বিজেপির অন্দরে চওড়া হচ্ছে ফাটল?
    আজকাল | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্যদিকে পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গডকরি। বিজেপির অন্দরে যে এই দুইটি মেরু রয়েছে, সে বিষয়ে খবর রাখেন অনেকেই। শাসকদলের অন্দরের কথা খুব একটা বাইরে না আসলেও দিল্লিতে কান পাতলে শোনা যায় মোদী-অমিত শাহের সঙ্গে নীতিন গডকরি কিংবা রাজনাথ সিং-এর মতো নেতার খুব একটা সখ্য নেই। এবার যেন বিজেপির অন্দরের সেই ফাটল প্রকাশ্যে চলে এলো পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকরির এক বয়ানে। সোমবার অখিল ভারতীয় মহানুভব পরিষদের ডাকা একটি সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে গডকরি দাবি করেন, যে নেতা সবচেয়ে বেশি মানুষকে বোকা বানাতে পারেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ নেতা হিসাবে পরিগণিত হন। আর পরিবহন মন্ত্রীর এই বক্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে নয়া বিতর্ক। তবে কি ঘুর পথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই নিশানা করলেন গডকরি?

    নিজের বয়ানে গডকরি বলেন, “সবকিছুতেই শর্টকাট আছে। মানুষ চাইলেই শর্টকাট ধরে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। রাস্তা পার হওয়ার সময়ও আপনি চাইলেই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করতে পারেন, কিন্তু এর অর্থ হল শর্টকাট আপনাকে আসলে ছোট করে দেয়। এ কারণেই মূল্যবোধ, সততা, অধ্যবসায় এবং সত্যবাদীতার মতো গুণগুলো শেখানো হয়। দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য চাইলে সত্যের পথেই হাঁটতে হবে। ঠিক যেমনটা কৃষ্ণ গীতায় বলেছেন - সবশেষে কেবলমাত্র সত্যই জয়ী হয়।” কথা প্রসঙ্গে গডকরি আরও জানান, তিনি যে পেশায় রয়েছেন অর্থাৎ রাজনীতিতে সত্যিকথা বলা একপ্রকার ‘নিষিদ্ধ’। তিনি বলেন, “আমি যে পেশায় রয়েছি সেই পেশাতে মন খুলে সত্যি কথা বলা এক প্রকার নিষিদ্ধ। যাঁরা মানুষকে সবচেয়ে ভাল বোকা বানাতে পারেন, তারাই সবচেয়ে ভাল নেতা হন।”

    নীতিন গডকরির এই মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এহেন মন্তব্যে পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ জুটিকেই বিদ্ধ করতে চেয়েছেন আরএসএস ঘনিষ্ঠ গডকরি। এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার সরকার প্রসঙ্গে আত্ম-সমালোচনামূলক কথা বলতে শোনা গিয়েছে গডকরিকে। গতমাসেই গডকরির অপর একটি মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছিল জল্পনা। সমাজ সচেতন নাগরিকদের সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মামলা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর ফলে সরকার এবং মন্ত্রীরা সঠিক পথে থাকতে বাধ্য হবেন বলেও মতামত দেন তিনি। একইভাবে গত বছর অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য বেশ কিছু সুযোগসন্ধানী নেতা সরকারের কাছাকাছি থাকতে চান বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই ধরনের নেতাদের দলে আগমন রাজনৈতিক আদর্শ এবং গণতন্ত্রের পক্ষে বিপদজনক বলেই জানান তিনি। সরকারিভাবে বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য না এলেও, মনে করা হচ্ছে এই মন্তব্যের মাধ্যমে দলবদলু নেতাদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন প্রবীণ বিজেপি সাংসদ।

    প্রসঙ্গত গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আশানুরূপ ফল না হওয়ার নেপথ্যে সংঘ এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দূরত্বকে দায়ী করেছিলেন অনেকে। সাংসদ এবং বিজেপি নেতা নাড্ডার আরএসএস সংক্রান্ত এক মন্তব্য সেই জল্পনা আরও উস্কে দেয়। পদ্ম শিবিরের অন্দরের খবর, বিজেপির উপর নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে গডকরি, রাজনাথ সিংহ এবং যোগী আদিত্যনাথ-এর মতো নেতাদের উপর বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সংঘ।

    বিষয়টি সম্পর্কে অবগত বিরোধী দলের নেতারাও। তাই বিজেপির অন্দরের এই জল্পনাকে দাবানলে উস্কে দিতে চাইছেন তাঁরাও। প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিক কংগ্রেস নেতা জানিয়েছেন গডকরির এই মন্তব্য অত্যন্ত সুচিন্তিত। এমনিতেই এসআইআর এবং ‘ভোট চুরি’-র অভিযোগ নিয়ে চাপে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আন্দোলন জোরদার করছেন রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদব-সহ বিরোধী নেতারা, তার মধ্যে গডকরির এই বয়ান মোদি সরকারকে ঘরে-বাইরে দুই জায়গাতেই চাপে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
  • Link to this news (আজকাল)