আজকাল ওয়েবডেস্ক: শিক্ষার খরচ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমে বাড়ছে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর এক আন্তর্জাতিক স্কুলের ফি-এর কাঠামো ঘিরে চরম বিতর্ক। ভারতে শিক্ষার খরচ দ্রুত হারে বাড়ছে, যা বহু অভিভাবকের জন্য বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শহুরে এলাকায় উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্কুল ফি আকাশছোঁয়া হয়ে উঠছে। আর ঠিক এই সময়ে আলোচনার ঝড় তুঙ্গে ওঠে বেঙ্গালুরুর একটি আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ফি কাঠামো ঘিরে। বিদ্যালয় ফি এর একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়।
এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ শেয়ার করা ওই স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে আন্তর্জাতিক ব্যাচেলরিয়েট (IB) বোর্ড অনুমোদিত স্কুলটির গ্রেড ১-এর বার্ষিক টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭.৩৫ লক্ষ টাকা। আরও অবাক করার মতো তথ্য হলো- এই অঙ্ক কেবলমাত্র গ্রেড ১-এর জন্য প্রযোজ্য। গ্রেড ১১-১২ তে এই ফি বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১১ লক্ষ টাকা।
এই বিপুল অঙ্কের মধ্যে কিন্তু বইপত্র, ইউনিফর্ম, পরিবহণ, কিংবা অতিরিক্ত কার্যক্রমের খরচ অন্তর্ভুক্ত নয়। এমনকী সেগুলোর জন্য আলাদা টাকা গুনতে হয় অভিভাবকদের। ফলে এই হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে মোট খরচ বছরে ৮ লক্ষ টাকারও বেশি হয়ে যেতে পারে একজন সন্তানের জন্য।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরের প্রোগ্রাম (গ্রেড ১–৫)-এর জন্য প্রতি ছয় মাসে ৩,৬৭,৫০০ টাকা করে দুই দফায় ফি দিতে হয়, অর্থাৎ বছরে ৭,৩৫,০০০ টাকা। খবর মারফত, এসব ছাড়া স্কুলটি একটি এককালীন, কিন্তু অ-ফেরতযোগ্য, ভর্তি ফি বাবদ ১ লক্ষ টাকা এবং একটি আবেদন ফি হিসেবে ১,০০০ টাকা আদায় করে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা পোস্টটিতে বলা হয়েছে, 'বেঙ্গালুরুর অন্যতম সেরা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক স্তরের বার্ষিক ফি কাঠামো দেখুন। গ্রেড ১ থেকেই বছরে ৭.৩৫ লক্ষ টাকা। সঙ্গে রয়েছে ১ লক্ষ টাকা অ-ফেরতযোগ্য ভর্তি ফি।'
এই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। পাশাপাশি নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কেউ বলছেন, এই রকম খরচ মূলত অভিজাত স্কুলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং পছন্দ অনুযায়ী মানুষ বেছে নেয়। আবার অনেকে শিক্ষা খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'চেন্নাইয়ের আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক ফি ২৭ লক্ষ টাকা। ভারতে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে, সবাই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বেছে নেয়। তাহলে অভিযোগ কিসের?'
অন্য একজন কড়া ভাষায় লিখেছেন, 'যদি কেউ যদি মনে করেন এই ফি স্বাভাবিক, তাহলে তাকে বাস্তবে ফিরে আসতে হবে। এটা শিক্ষা, যা একটি মৌলিক মানবাধিকার।'
আরও এক ব্যবহারকারীর দাবি, 'ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বেঙ্গালুরুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত চরম লোভী হয়ে উঠেছে। মজার বিষয় হলো, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান রাজনীতিবিদ বা তাঁদের আত্মীয়দের মালিকানাধীন, হয় সরাসরি, নয়তো অন্য কোনও পথে। সরকারের কি সত্যিই ইচ্ছা আছে এই ফি নিয়ন্ত্রণে আনার?'
আরেকজন প্রশ্ন তোলেন, 'আপনি কি এই ফি গড় ধরে দিয়েছেন, নাকি সবচেয়ে ব্যয়সাধ্য স্কুলটিরটা তুলে ধরেছেন? কারণ নয়ডার সবচেয়ে ভালো স্কুলেও এত খরচ হয় না।'
অন্য একজন মন্তব্য করেছে, 'এটা আর শিক্ষা নয়, এটা একপ্রকার ব্ল্যাকমেইল স্কুলের পোশাকে। গ্রেড ১-এর জন্য সাত লক্ষ টাকা, সঙ্গে এক লক্ষ ভর্তি ফি- যা কোথাও রেকর্ডেই থাকবে না। অভিভাবকদের ভুল ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে এই বিপুল অর্থ ব্যয় করলে সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। কিন্তু তাঁরা আসলে যা সইছেন, তা হল মানসিক চাপ। এটি অহংবোধ, আর এমন এক সিস্টেম- যেখানে মেধার চেয়ে টাকাই বড়।'
ঘটনার জেরে একজন লিখেছেন, 'দুঃখজনক বিষয় হলো, বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষা একদমই বিনামূল্যে দেওয়া হয়। আর এখানে এটা পুরোপুরি ব্যবসা হয়ে উঠেছে।'
প্রসঙ্গত এর কিছুদিন আগে, এক রেডিট ব্যবহারকারীর পোস্ট ঘিরেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সেখানে বলা হয়- গুগল-এ কাজ করা এক দম্পতি তাঁদের সন্তানের স্কুল ফিতে বছরে ১১.২ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন। পোস্টদাতা একটি ছোট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র লেভেলে কাজ করেন। তিনি জানান, এক ক্লায়েন্ট ফাইল রিভিউ করার সময় তিনি এই তথ্য দেখতে পান।
তিনি লেখেন, 'ওই দম্পতির বার্ষিক আয় ৬০ লক্ষ টাকা। তাঁদের বছরে শুধুমাত্র একটি সন্তানের জন্য ১১.২ লক্ষ টাকার শিক্ষা খরচ দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই।' নিজের জীবনের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, 'এটাই প্রথমবার আমি এত বড় অঙ্কের ফি দেখলাম। আমি ২–৪ লক্ষ বা বড়জোর ৫–৬ লক্ষ টাকা শুনেছি। কিন্তু ১১.২ লক্ষ! আর তাছাড়া আমি ২০–৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে MBA করব কি না, তা নিয়েও শতবার ভাবব।'
এই ঘটনার জেরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়- বাড়তে থাকা শিক্ষার খরচ, আর্থিক বৈষম্য এবং জীবনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। সার্বিকভাবে, এ ঘটনা ফের মনে করিয়ে দেয় ভারতের শহরাঞ্চলে উচ্চমানের শিক্ষা এখন শুধুমাত্র ধনীদের অধিকার হয়ে পড়ছে কি না, সেই প্রশ্ন আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।