হিমাচলকে ‘বিপর্যস্ত রাজ্য’ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, ভূমিধসে আরও ৪ জনের মৃত্যু শিমলায়
প্রতিদিন | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লাগাতার বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা হিমাচল প্রদেশের। হড়পাবান ও ভূমিধসে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে এবার হিমাচলকে ‘বিপর্যস্ত রাজ্য’ হিসেবে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু। সোমবার দুর্যোগের জেরে রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট তুলে ধরে এই ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে রবিবার ভোররাতে নতুন করে ভূমিধসের কবলে পড়েছে শিমলার কোটখাই, জুব্বল ও জুঙ্গা এলাকায়। এই ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত সপ্তাহে হিমাচল রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের তরফে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বর্ষার মরশুম শুরুর পর অর্থাৎ ২০ জুন থেকে হিমাচলে ৩২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ অতি বৃষ্টির জেরে ভূমিধস, হড়পা বান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে হড়পা বানে ভেঙে গিয়েছে ঘরবাড়ি। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাড়ি দুর্ঘটনায়। এর নেপথ্যেও পরোক্ষে রয়েছে অতিবৃষ্টি। রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে গাড়ি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত একমাসে এই বৃষ্টির ফলে হিমাচল প্রদেশের পরিকাঠামো ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০০-র বেশি রাস্তা। এর সঙ্গে দুটি জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ৫১টি জায়গায় পানীয় জলের পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ২.৫০ লক্ষ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ৪০ হাজারের বেশি কৃষক এই দুর্যোগের জেরে বিপাকে পড়েছে। রাজ্যের মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ লক্ষ কোটি।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে হিমাচলকে ‘বিপর্যস্ত রাজ্য’ ঘোষণার ফলে রাজ্যের সর্বত্র বিপর্যয় মোকাবিলায় আর্থিক সাহায্য করা হবে। হিমাচলের মুখ্যসচিব প্রবোধ সাক্সেনা বলেন, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। তবে এখনও লাগাতার ভারী বৃষ্টি চলার ফলে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। ‘বিপর্যস্ত রাজ্য’ ঘোষণার ফলে সমস্ত জেলাশাসককে ৩৪ নম্বর ধারার অধীনে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পূর্ত, জলশক্তি ও বিদ্যুৎ দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার। দ্রুত গতিতে রাস্তাঘাট মেরামতের নির্দেশ জারি হয়েছে। পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যথাযথভাবে পুনর্বাসন ও ত্রাণ পরিষেবা চালু রাখার।
এর পাশাপাশি রাজ্যের সাংসদদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা যেন এই ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলায় কেন্দ্রের কাছে বিশেষ ত্রাণের আবেদন জানান। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলমত পিছনে ফেলে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আর্জি জানান সুখু। পাশাপাশি বলেন, “হিমাচল প্রদেশের এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য দায়ী বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন। আমি রাজ্যের মানুষের কাছে অনুরোধ তারা যেন খুব প্রয়োজন ছাড়া দূরে সফর না করেন। এবং নদীর কাছাকাছি না যান। এই বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসেব করা হবে।”