ইস্তফার ৪০ দিন পর সরকারি বাসভবন ছাড়লেন ধনকড়, নতুন ঠিকানা কোথায়?
প্রতিদিন | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইস্তফার পর পেরিয়ে গিয়েছে ৪০ দিন। অবশেষে সরকারি বাসভবন ছাড়লেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। সোমবার তিনি দক্ষিণ দিল্লির ছাত্তারপুরের একটি ফার্ম হাউসে গিয়ে উঠেছেন বলে খবর। প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি যে ফার্ম হাউসটিতে উঠেছেন সেটি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দল (আইএনএলডি)-র প্রধান অভয় সিং চৌটালার। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আপাতত বেশ কয়েকমাস তিনি সেখানেই থাকবেন।
নিয়ম অনুযায়ী, দু’বছরের বেশি সময় দায়িত্ব সামলানোর পর যদি উপরাষ্ট্রপতি ইস্তফা দেন তাহলে তাঁকে অবসরপ্রাপ্ত উপরাষ্ট্রপতিদের মতোই সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়। সেই নিয়মে ইস্তফার পরও টাইপ এইট বাংলো পাওয়ার কথা ধনকড়ের। সমস্যা হল, ইস্তফার পর দীর্ঘদিন সরকারি বাংলোর জন্য আবেদনই করেননি প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি। তিনি যতদিনে আবেদন করলেন ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, ধনকড়ের জন্য লুটিয়েন্স দিল্লিতে ৩৪ নম্বর এপিজে আবদুল কালাম মার্গের একটি টাইপ এইট বাংলো বরাদ্দ করা হয়েছে বটে, কিন্তু সেই বাড়িতে আবার এখন বাস করছেন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ওই বাড়িটি তাঁর ছেড়ে দেওয়ার কথা।
সমস্যা হল ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এখন বাড়ি ছাড়লেও সেটিকে সংস্কার করতে হবে। উপরাষ্ট্রপতির বসবাসের উপযুক্ত করতে হবে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেসব করতে কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ত দপ্তরের অন্তত ২-৪ মাস সময় লাগবে। সূত্রের খবর, ততদিন পর্যন্ত দিল্লির ছাত্তারপুরের ওই ফার্ম হাউসেই থাকবেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি। এর আগে উপরাষ্ট্রপতি পদমর্যাদার কোনও ব্যক্তিকে এভাবে বেসরকারি বা ভাড়াবাড়িতে থাকতে হয়নি। যদিও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্র বলছে, এই বিষয়টি পুরোটাই হয়েছে পদ্ধতিগত কারণে। এর নেপথ্যে কোনও রাজনীতি নেই। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে এসবের মধ্যে আবার ধনকড় প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক হিসাবে প্রাপ্য পেনশনের জন্য আবেদন করেছেন।
গত ২১ জুলাই হঠাৎ নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। তাঁর এই ইস্তফা নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয় জাতীয় রাজনীতিতে। এই ইস্তফার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেন তিনি। তবে একদিন আগেও যিনি সংসদে বহাল তবিয়তে কাজ করেছেন। অতীতে অসুস্থ হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে যিনি সংসদের কাজে যোগ দিয়েছেন তাঁর এমন ইস্তফা স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা বাড়ায়। বিরোধীরা অভিযোগ করে মোদি সরকারের চাপের মুখে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন ধনকড়। সেই জল্পনার মাঝেই কার্যত নিখোঁজ হয়ে যান প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, ধনকড় তো বটেই তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে কী ঘটেছে? তিনি কোথায় রয়েছেন? তিনি কি নিরাপদে আছেন? তা জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও লেখেন সঞ্জয় রাউত। জল্পনা শুরু হয়, মোদি সরকারের ভাঁড় ভাঙতে উদ্যোগী হওয়ায় তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে গৃহবন্দি করা হয়েছে।
এই বিতর্কের মাঝেই সম্প্রতি ‘এএনআই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ধনকড় প্রসঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, “জগদীপ ধনকড় একটি সাংবিধানিক পদে ছিলেন। নিজের কার্যকালে সংবিধান মেনে যথেষ্ট ভালো কাজ করেছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। ফলে এই বিষয়টিকে নিয়ে অযথা লেবু কচলানোর কোনও প্রয়োজন নেই। বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করাও উচিত নয়। তিনি তাঁর সুন্দর কার্যকালের জন্য প্রধানমন্ত্রী-সহ সরকারের সকল পদাধিকারিকদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন।” নানা জল্পনা দিল্লির রাজনীতিতে মাথাচাড়া দিলেও সেসব খারিজ করে শাহ।