অভিষেক চৌধুরী, কালনা: ফের প্রকাশ্যে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল। কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার ঘটনা। বিজেপির জেলা সভানেত্রীর নাম এবং ছবি দিয়ে জেলাজুড়ে পড়ল পোস্টার। যেখানে বিজেপি জেলা সভানেত্রীকে ‘চোর’, ‘দুশ্চরিত্রা’, ‘মাকুমূল’ এবং ‘হার্মাদ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, জেনারেল সেক্রেটারির নামেও পোস্টার দেওয়া হয়েছে। একাধিক পোস্টার শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে। এক পোস্টারে এক মণ্ডল সভাপতিকে বহিরাগত, ভুয়ো ভোটার বলে তার মুখের ছবিতে দাগ দিয়ে কেটে ‘মানছি না, মানব না’ লেখা হয়েছে। আরও এক পোস্টারে জেলা কমিটিকে ‘কামিনী-কাঞ্চন ভোগী’ বলেও দাবি করা হয়েছে।
এহেন পোস্টার ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। কে বা কারা এই পোস্টার লাগিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিতর্কিত ওই পোস্টারে ‘বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ’ -র নাম উল্লেখ রয়েছে। এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। যদিও শাসকদলের দাবি, এই ঘটনা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে হয়েছে। তবে জেলা সভানেত্রী ও জেনারেল সেক্রেটারির বিরুদ্ধে পোস্টার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ‘অমূলক’ নয় বলেই দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির একাধিক বর্ষীয়ান নেতার। ফলে বিধানসভা ভোটের আগে রীতিমতো চাপের মুখে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।
কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল নতুন নয়। একাধিক সময়ে একাধিক ইস্যুতে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু তাই নয়, জেলা সভাপতির অপসারণের দাবিতে বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রকাশ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমনকী বাঁশ, লাঠি হাতে দু’পক্ষ মারামারিতে জড়ায়। আর সেই ক্ষোভ থেকেই ভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করেন বিজেপি নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, বর্ধমান শহর, কালনা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ‘বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ’ -র পক্ষ থেকে পোস্টারও পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে কয়েক মাস আগে বিজেপির জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের পরিবর্তে জেলা সভানেত্রী হন স্মৃতিকণা বসু। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়নি! এদিনের ঘটনা তারই প্রমাণ বলে দাবি করছেন জেলার বহু ‘বিদ্রোহী’ বিজেপি নেতাই।
এদিন সকালে কালনা শহরের একাধিক জায়গায় যে সমস্ত পোস্টার লাগানো হয়েছে, তার মধ্যে একটিতে বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি স্মৃতিকণা বসু ও জেনারেল সেক্রেটারী সুমন বসুর মুখের ছবিতে কাটা দাগ এঁকে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পোস্টারে সভানেত্রীকে ‘চোর’ এবং ‘দুশ্চরিত্রা’ সম্বোধন করে ‘ সভানেত্রীর কীর্তি’ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। পোস্টারে ভোটের টাকা আত্মসাৎ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সভার বরাদ্দকৃত অর্থ লুট, সংস্কারিত ও দলীয় নেতৃত্বের মনোরঞ্জন করে পদলাভের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে অযোগ্য জেলা কমিটি, ভুয়ো মণ্ডল কমিটি, ভুয়ো শক্তিকেন্দ্র, ভুয়ো বুথ কমিটির কথা। যদিও এই ঘটনা তৃণমূল করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির। জেনারেল সেক্রেটারী সুমন ঘোষ বলেন, “বিজেপিতে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ বলে কিছুই নেই। এটা তৃণমূলের কাজ। নোংরা কালচারের রাজনীতি ওরাই করে। প্রচারের আলোয় আসতেই এই ঘটনা তৃণমূল ঘটিয়েছে। বিজেপি একটি সাংগঠনিক দল।” বিজেপির জেলা সভানেত্রী স্মৃতিকণা বসুকে ফোন করা হলে তার কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। অন্যদিকে কালনার তৃণমূল নেতা তথা উপপুরপ্রধান তপন পোড়েল বলেন,“ এই ঘটনা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। শুধু এই জেলাতেই যে বিজেপির দ্বন্দ্ব রয়েছে তা নয়, রাজ্যজুড়েই তাদের এই ঘটনা ঘটছে। গত কয়েকদিন আগেই কালনার পুরশ্রীতে সেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।