নয়াদিল্লি: আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু মিছিল। খবরটা শুনতেই আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিল ভারতে বসবাসকারী আফগান নাগরিকদের। তড়িঘড়ি ফোন করেছিলেন বাড়িতে। কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকায় কথা হয়নি। ফলে এই মুহূর্তে উদ্বেগই সঙ্গী আসিম, ফারজান, নাসির, করিমের মতো কয়েকশো আফগানের। উদ্বেগে ঘুম উড়েছে ওদের অনেকেরই। রাত কাটছে ফোনের দিকে তাকিয়ে। যদি কোনও ভাবে একবার অন্তত পরিবারের মানুষগুলির সুস্থতার খবর পাওয়া যায়।
রবিবার রাতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার খানেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে আফগানিস্তানে। ধুলোয় মিশেছে একের পর এক গ্রাম। পূর্ব আফগানিস্তানের যে সব এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে, তার বেশিরভাগই প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা। ফলে সঠিক ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পাওয়া যায়নি। হতাহতের সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে মনে করছে তালিবান সরকার।
সেন্ট্রাল দিল্লিতে একটি ড্রাই ফ্রুটের দোকান রয়েছে বছর কুড়ির আসিমের। তাঁর ঠাকুমা ও পরিবারের অন্যান্যরা থাকেন জালালাবাদে। ভূমিকম্প যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি করেছে, সেই তালিকায় উপরের দিকেই নাম জালালাবাদের। আসিম বলেন, ‘দু’ বছর আগে আমি কাকার সঙ্গে জীবিকার তাগিদে দিল্লিতে আসি। দু’ সপ্তাহ আগেও মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। সকালে ভূমিকম্পের খবর পেয়েই বাড়িতে ফোন করি। কিন্তু ফোন যায়নি। প্রার্থনা করছি সকলে ভালো আছেন।’
আসিমের সঙ্গেই কাজ করেন বছর চব্বিশের ফারজান। তাঁরও বাড়ি ভূমিকম্প প্রভাবিত এলাকাতেই। ফারজান বলেন, ‘তিন বছর আগে দাদার সঙ্গে এসেছি। সকাল থেকে একশোর বেশি ফোন করেছি বাড়িতে। কিন্তু পরিবারের কারও সঙ্গে কথা হয়নি। কিছু খেতেও মন চাইছে না।
দিল্লির একটি রেস্তরাঁর কর্মচারী নাসির খান (৩৫) বলেছেন, ‘এরকম কোনও খবর এলে নিজেকে অসহায় লাগে। পরিবারের লোকজন কেমন আছে, জানার কোনও উপায়ই নেই। কয়েকবছর আগে এমনই এক ভূমিকম্পে খুড়তুতো ভাইকে হারিয়েছিলাম।’ করিম নামের অন্য এক আফগান নাগরিকের কথায়, ‘আমার কাকা ওই এলাকায় থাকেন। শুধু নিউজ চ্যানেল থেকে খবর পাচ্ছি। আমাদের কিছুই করার নেই। আশা করছি, সব ঠিকঠাক রয়েছে।’
শুধু ভূমিকম্প প্রভাবিত এলাকার বাসিন্দারা নন, যারা ওই এলাকায় থাকেন না আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরাও। মহম্মদ ওয়াসিম নামের এক গাড়িচালক জানিয়েছেন, ‘ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে আমার বাড়ি মাত্র এক ঘণ্টার পথ। এত কাছে কোনও বিপর্যয় ঘটলে আশঙ্কা থেকেই যায়।’