বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতীয় পরিভাষা তৈরি করছে কেন্দ্র, বরাদ্দ ৬ হাজার কোটি
বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কম্পিউটারের অন্যতম ‘যন্ত্রাংশ’ ‘মাউস’ শব্দটি বাংলাসহ সব ভাষাতেই মোটামুটি প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) লিঙ্গুইস্টিক রিসার্চ ইউনিট (এলআরইউ) কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব করছে যে বাংলা ভাষায় এর প্রতিশব্দটা হোক ‘মূষিক’। অক্সিজেনের একটি বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘অম্লজান’। যদিও বাংলা পাঠ্যপুস্তকেই এর ব্যবহার তেমন দেখা যায় না। অক্সিজেন শব্দটিই সাধারণত লেখা হয়। এলআরইউ চাইছে অক্সিজেন কথাটিই বাংলাতেও লেখা হোক। এটাই মানুষের কাছে বেশি বোধগম্য হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যেসব পরিভাষা ব্যবহার করা হয় সেগুলিকে বাংলাসহ ২০টি ভারতীয় ভাষায় পরিবর্তন করার একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষামন্ত্রকের অধীন ভারতীয় ভাষা সমিতি। কয়েকবছর ধরেই এর কাজ চলছে। প্রকল্পটির বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আইএসআইয়ের লিঙ্গুইস্টিক রিসার্চ ইউনিট এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন পরিভাষার জন্য বাংলা শব্দ তৈরির করার দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুরো প্রকল্পটি পরিচালনার ক্ষেত্রে আইএসআইয়ের বড় ভূমিকা আছে।
সোমবার আইএসআই’তে এই বিষয়ে তিনদিনের এক সর্বভারতীয় কর্মশালা শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যের শতাধিক প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট ভাষা বিশেষজ্ঞরা এসেছেন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে এক সাক্ষাৎকারে রিসার্চ ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক নীলাদ্রিশেখর দাস জানান, গণিত ও পরিসংখ্যান বিষয়ে বাংলা পারিভাষিক শব্দ তৈরি করে তা কমিশন ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল টার্মিনোলজির কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন তারা সেগুলি খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত শব্দ তালিকা সংবলিত নথি প্রকাশ করবে।
সাধারণ মানুষের জ্ঞাতার্থে ডিজিটাল মাধ্যমে সেগুলি প্রকাশ করা হবে। প্রতিশব্দের তালিকা রাজ্য শিক্ষাদপ্তর, রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রভৃতি সংস্থার কাছেও পাঠানো হবে। অধ্যাপক দাস জানান, প্রতিশব্দ চূড়ান্ত হয়ে গেলে শিক্ষা সংক্রান্ত পুস্তক ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে সেগুলির ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার সব শাখা বা বিষয়ের সমস্ত ভারতীয় পারিভাষিক শব্দ তৈরি হতে সময় লাগবে। আইএসআইয়ের এলআরইউ এখন একটি বিষয়ের উপর কাজ করছে। তার উপর প্রায় ১২ হাজার উপযুক্ত বাংলা শব্দ সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিশব্দ চয়নের ক্ষেত্রে ওই ভাষা থেকে কিছু করার চেষ্টা প্রথমে করা হচ্ছে। তা সম্ভব না-হলে অন্য ভাষা, বিশেষ করে সংস্কৃতের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেমন কম্পিউটারের বাংলা হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে ‘যন্ত্রগণক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তবে এলআরইউ সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা ব্যবহারগত সুবিধার জন্য ‘যন্ত্রক’ শব্দটি চাইছে। এদিন ‘ট্রান্সক্রিয়েশন অব ইউনিফর্ম সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল টার্মিনোলজি ফর ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস’ শীর্ষক তিনদিনের ওয়ার্কশপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আইএসআইয়ের ডিরেক্টর সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই উদ্যোগটি কেন গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখা করেন তিনি।