• আপাতত বন্ধ চারধাম যাত্রা, প্রকৃতি ধ্বংসে দায়ী কেন্দ্রেরই ‘প্ল্যান’, ক্ষুব্ধ পুরোহিতরা
    বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব  প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ভাঙন, ধস, বন্যা, মৃত্যু, নদীস্রোত এবং ধ্বংসের মাত্রা চরম পর্যায়ে। তার মধ্যেই ফের প্রবল বর্ষার পূর্বাভাস। তার জেরে উত্তরাখণ্ড সরকার সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, চারধাম যাত্রা আপাতত স্থগিত। ৫ সেপ্টেম্বর পরিস্থিতি পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে। তারপরই সিন্ধান্ত নেওয়া হবে যে, কবে নাগাদ যাত্রা শুরু করা যেতে পারে! আপাতত অনির্দিষ্টকাল বন্ধই থাকবে চারধাম এবং হেমকুণ্ড সাহিব যাত্রা। প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলার জন্য কেন্দ্র-রাজ্যের বিজেপি সরকারই দায়ী বলে তোপ দেগেছে পুরোহিত মঞ্চ, পান্ডা সংগঠন, ব্যবসায়ীদের মহাপঞ্চায়েত। অবিলম্বে সব রকম অতি উন্নয়নের কাজ বন্ধের দাবি করা হয়েছে। পুরোহিত মঞ্চ, পান্ডা সংগঠনের সাফ অভিযোগ, সংস্কার এবং পুনর্গঠনের নামে দেবভূমির মাহাত্ম্য ধ্বংস করা হচ্ছে। কেদারনাথ থেকে বদ্রীনাথ, মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে ধর্মীয় ও পৌরাণিক স্থানও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কখনও বাঁধ, কখনও হাইওয়ে, কখনও পরিকাঠামো নির্মাণের প্ল্যান নেওয়া হয়েছে বিগত বছরগুলিতে। আর সেই কারণেই প্রকৃতি ও দেবতা ক্ষুব্ধ। শুরু হয়েছে প্রতিশোধ নেওয়া।

    কেন্দ্র ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে উত্তরাখণ্ড সরকারকে—ঝুঁকি নিয়ে চারধাম যাত্রা যেন সচল রাখা না হয়। আগে সম্পূর্ণ নিরাপদ হবে যাত্রাপথ, তারপর শুরু হবে। উত্তরাখণ্ড সরকারের পক্ষ থেকেও তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের বলা হয়েছে, যে যেখানে আটকে পড়েছেন, সেখানেই থাকুন। আর অগ্রসর হবেন না। কারণ, দেবভূমিতে আগামী কয়েকদিন পুনরায় প্রবল বর্ষা হবে। এবং ফের বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কায় বিনিদ্র থাকছে সরকার। এই পরিস্থিতিতেই দেখা দিয়েছে নতুন আশঙ্কা, উত্তরাখণ্ডের দেবভূমি কি ক্রমেই ধ্বংসপ্রাপ্ত ধর্মস্থানে পরিণত হবে না তো?

    এই পরিস্থিতিতে রবিবার হরিদ্বার রোডের ভগবান আশ্রমে বৈঠক করেছে পান্ডা সংগঠন, পুরোহিত মণ্ডল মহাপঞ্চায়েত। তারা সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘বদ্রীনাথ ধামের মধ্যে নিছক মন্দির নয় এমন অনেক টিলা, পাহাড়, ক্ষুদ্র মন্দির রয়েছে, যেগুলির সঙ্গে পৌরাণিক ও ধর্মীয় মাহাত্ম্য শয়ে শয়ে বছর ধরে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অথচ সংস্কারের নামে এগুলি হয় ভেঙে ফেলা হচ্ছে, নয়তো রূপবদলের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ কেদারনাথ ধাম, রুদ্রপ্রয়াগ, গুপ্তকাশীর পুরোহিত ও পান্ডাদের বক্তব্য, ২০১৩’র সেই মেঘভাঙা বৃষ্টি থেকে অভিশাপ শুরু হয়েছিল। কারণ, দেবভূমিকে যিনি সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন, সেই ধারীমাতার মন্দিরকে বাঁধ নির্মাণের জন্য সরিয়ে দেওয়া হয়। আর তারপরই নেমে আসে ওই ভয়াল দুর্ঘটনা। মহাপঞ্চায়েতের সভাপতি কৃষ্ণকান্ত কোটিয়াল বলেছেন, ‘১৯৭৬ সালে তৎকালীন উত্তরপ্রদেশ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হেমবতী নন্দন বহুগুণা একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। ওই কমিটি রিপোর্ট দিয়ে বলেছিল, বদ্রীনাথ ধাম একটি দ্বীপের মতো। এখানে কোনও পরিকাঠামো সংস্কার, কাঠামো বদল, নির্মাণকার্য করা যাবে না। কিন্তু সরকার ধর্মস্থানের সংরক্ষণের পরিবর্তে উন্নয়নের নামে যথেচ্ছাচার চালাচ্ছে।’ মহাপঞ্চায়েত ও পুরোহিতদের দাবি, এর জন্যই প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলা।
  • Link to this news (বর্তমান)