নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: অবশেষে পুলিসের জালে দেশরাজ সিং! কৃষ্ণনগরের ছাত্রী ঈশিতা মল্লিক (১৯) খুনে মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হল যোগীরাজ্য থেকেই। দালালদের মাধ্যমে সীমান্ত পার করে নেপাল যাওয়ার ছক কষেছিল সে। তার আগেই রবিবার রাতে উত্তরপ্রদেশের মহারাজগঞ্জ জেলার নৌতানওয়া থানা এলাকায় নেপাল সীমান্তবর্তী বেড়িয়াবাসার চেকপোস্ট থেকে তাকে পাকড়াও করেন তদন্তকারীরা। দেওরিয়ার বাহুবলীদের রক্তচক্ষু, গ্যাংস্টারদের ঘেরাটোপ উপেক্ষা করে সাতদিনের মাথায় এই খুনের ঘটনার কিনারা করল কৃষ্ণনগর পুলিস। ১৫ জন পুলিস কর্মীকে তিনটি টিমে ভাগ করে উত্তরপ্রদেশ অভিযান চালিয়েছিল কৃষ্ণনগর পুলিস। তদন্তকারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঈশিতার মা কুসুম মল্লিক। পুলিসের কাছে তাঁর আকুতি, মেয়ের খুনি যেন ফাঁসির সাজা পায়! সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ দেশরাজকে নিয়ে কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানায় ফেরেন তদন্তকারী টিম। পরে আদালতে হাজির করা হলে দেশরাজকে দু’দিনের জেল হেফাজতে পাঠান বিচারক। এই পর্ব শেষ হলেই দেশরাজকে হেফাজতে চেয়ে আবেদন করবে পুলিস।
তদন্তকারীরা বলছেন, খুনের পর থেকে দেশরাজকে সব ধরনের ইন্ধন জোগাচ্ছিল তার পরিবার। বিশেষ করে বাবা রাঘবেন্দ্র প্রতাপ সিং এবং মামা কুলদীপ সিং। রবিবার গুজরাতের জামনগর থেকে কুলদীপকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জেরা করেই হদিশ মেলে ভাগ্নে দেশরাজের। সূত্রের খবর, ভাগ্নেকে পাকড়াও করতে মামাকে কার্যত টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিল পুলিস। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার সুপার কে অমরনাথ বলেন, ‘ইতিমধ্যেই কর্মস্থল রাজস্থানের জয়সলমিরে গিয়ে রাঘবেন্দ্র প্রতাপকে হাউস অ্যারেস্ট করা হয়েছে। খুব শীঘ্র তাঁকেও কৃষ্ণনগরে নিয়ে আসা হবে।’
কীভাবে হদিশ মিলল দেশরাজের? তদন্তকারীরা বলছেন, গত ২৫ আগস্ট খুনের পর কৃষ্ণনগর থেকে নৈহাটি হয়ে হাওড়া এবং সেখান থেকে ট্রেনে বরাকর পৌঁছয় দেশরাজ। পরদিন আসানসোল হয়ে অযোধ্যা। একটি হোটেলে উঠে মালিক সুমিত তেওয়ারিকে জানায়, তার মোবাইল, টাকা, পরিচয়পত্র চুরি গিয়েছে। টাকার প্রয়োজন, তাই রাজস্থানে বাবাকে ফোন করতে চাই। সুমিতের ফোন থেকে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে সে। রাঘবেন্দ্র হোটেল মালিকের অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকা পাঠান। তা থেকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনে দেশরাজ। হোটেলের ওয়াই ফাই ব্যবহার করে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। রাঘবেন্দ্র ছেলেকে জানান, দঙ্গল ও মঙ্গল সিংয়ের নেটওয়ার্ক আছে নেপালে। সেখানে গা-ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। মহারাজগঞ্জ হয়ে ছেলেকে নেপাল যাওয়ার পরামর্শ দেন রাঘবেন্দ্রই।
মামা কুলদীপ সিং আবার নিজের মেয়ের আধার কেন্দ্র থেকে ভাগ্নের ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে দেয়। সেখানে দেশরাজের নাম হয় কার্তিক। ঠিকানা দেওয়া হয় মহারাজগঞ্জের। তদন্তকারীরা বলছেন, কুলদীপকে গ্রেপ্তারের পর তার মোবাইল থেকে দেশরাজের নয়া পরিচয়পত্র মেলে। সম্ভাব্য লোকেশনও জানতে পারে পুলিস। শুরু হয় নজরদারি। ইতিমধ্যে কেনা নতুন মোবাইলটি ফেলে রেখে নেপালের দিকে রওনা দিয়েছিল দেশরাজ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।