প্রভাবশালীদের সুপারিশ ধন্য অযোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ-সুবিধাই রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের কর্তাদের অগ্রাধিকার ছিল বলে আদালতে চার্জশিট পেশ করে জানিয়েছে সিবিআই। সম্প্রতি আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে এসএসসি-র গ্রুপ সি-র মামলায় চতুর্থ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হয়।
আদালত সূত্রে খবর, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে গ্রুপ সি মেধা তালিকা প্রকাশের আগে এসএসসি-র প্রাক্তন সচিব সুবীরেশ ভট্টাচার্য, ওএমআর শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসা-র দুই কর্মচারী নীলাদ্রি সাহা ও পঙ্কজ বনসল এবং এসএসসি-র দুই ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সমরজিৎ আচার্য ও পর্ণা ঘোষকে নিয়ে একটি বৈঠকে বসেছিলেন। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, সুবীরেশের বাড়িতে সব অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা নিয়ে ওই বৈঠক হয়েছিল। সেখানে অযোগ্যদের নামের তালিকা প্রথমে যাচাই করা হয়। টাকার বিনিময়ে সুপারিশপ্রাপ্ত সেই অযোগ্যদের জায়গা পাকা করার প্রক্রিয়া চলছিল। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যোগ্যদের নাম তার পর বিবেচনা করা হয়। সিবিআইয়ের দাবি, এটি সংগঠিত অপরাধ। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী, অযোগ্যদের মেধা তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজ তাঁর ঘনিষ্ঠ সুবীরেশ সেরেছিলেন বলে দাবি।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, প্রথমে অযোগ্যদের নামের তালিকা ধরে ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়। অযোগ্যদের নম্বর বাড়িয়ে ‘যোগ্য’ বলে দেখানো হয়। নাইসা-র দুই কর্মচারী নীলাদ্রি ও পঙ্কজ এ কাজে সুবীরেশের নির্দেশ পালন করেন বলে দাবি। ওই সূত্র জানাচ্ছে, এর পরে এসএসসি-র দুই ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে অযোগ্যদের মেধা তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দেন সুবীরেশ।
তদন্তকারীদের কথায়, ২০১৬ সালে এসএসসি-র যে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই প্যানেলের মেয়াদ ছিল ২০১৮’র ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে টাকা নিয়ে ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বেআইনি ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে বলে দাবি। ওএমআর শিট বিকৃত করে এসএসসি-র ওয়েবসাইটে অযোগ্যদের ‘যোগ্য’ বলে দেখিয়ে নাম তোলা চলতে থাকে।
চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, সুবীরেশের বাড়ির ওই বৈঠকের অংশবিশেষের ভিডিয়ো, অডিয়ো রেকর্ডিং একটি পেনড্রাইভে উদ্ধার হয়েছে। তবে বৈঠকে সুবীরেশের সঙ্গীদের মধ্যে কে ওই রেকর্ডিং করেন, তা চার্জশিটে বলা হয়নি। আদালত সূত্রে খবর, সিবিআইয়ের তরফে ওই বৈঠকের অডিয়ো-ভিডিয়ো অংশটির ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য সুবীরেশ-সহ পাঁচ অভিযুক্তের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই নমুনা বিচারকের কাছে পেনড্রাইভে জমা দেওয়া হয়। অডিয়ো-ভিডিয়োর অংশ এবং কণ্ঠস্বরের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে খবর, ওই মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং প্রাক্তন সচিব সুবীরেশ ভট্টাচার্যের শর্তাধীনে জামিন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে চার্জ গঠন করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর পরেই নিম্ন আদালত চূড়ান্ত জামিন মঞ্জুর করবে বলে নির্দেশ শীর্ষ আদালতের। আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালত সূত্রে খবর, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির একাদশ-দ্বাদশ, নবম-দশম গ্রুপ এবং গ্রুপ ডি-র মোট চারটি মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট আদালতে জমা পড়েছে।