ভিন্ রাজ্য থেকে ভুয়ো শংসাপত্র, গাড়ি চিহ্নিত করছে পরিবহণ দফতর
আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কলকাতায় পুলিশের হাতে ধরা পড়া একটি লরি যে দিন দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল থানার কাছে, ঠিক সে দিনই নাকি সেই লরির স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে সুদূর রাজস্থানে! লরিটি ‘স্বাস্থ্যবান’ বলে শংসাপত্রও (ফিটনেস সার্টিফিকেট) তৈরি হয়ে গিয়েছে রাতারাতি। সেই লরিই রাস্তায় নেমে এর পরে পিষে দিয়েছে পথচারীকে। চালক পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ব্রেক ধরেনি। ফিটনেস সার্টিফিকেট-সহ নথিপত্র খতিয়ে দেখতে গিয়ে হতবাক পুলিশের প্রশ্ন, থানার জিম্মায় থাকাকালীনই ওই লরি কলকাতা থেকে প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দূরের রাজস্থানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গেল কী করে? কারাই বা নিয়ে গেল? লরিটি সেখানে না গিয়ে থাকলে সেটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে গেল কী ভাবে? তবে কি এই ফিটনেস সার্টিফিকেট ভুয়ো?
তদন্তে নেমে তাজ্জব পুলিশ পরিবহণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সামনে আসে, কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সারা রাজ্যে কয়েক হাজার এমন গাড়ি রাস্তায় চলছে, যেগুলির ফিটনেস সার্টিফিকেট ঘুরপথে করিয়ে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক কিছু রাজ্যে বেসরকারি মালিকানাধীন স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বহু গাড়ির মালিক ভিন্ রাজ্যে না গিয়েও দালাল মারফত গাড়ির ছবি পাঠিয়ে শংসাপত্র করিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
নির্দিষ্ট পারমিট না থাকলেও অন্য রাজ্য থেকে গাড়ির শংসাপত্র জোগাড় করে আনার ঘটনায় চোখ কপালে উঠেছে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের। বিভিন্ন আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ এমন গাড়িকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দফতরের হিসাব অনুযায়ী, ওই সংখ্যা ১৫০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি দেখে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করার কথা আগে জানিয়েছিলেন দফতরের মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন গত ২৭ অগস্ট এ নিয়ে নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরকে ওই সব গাড়ির অনুপুঙ্খ তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সব গাড়ির যাবতীয় নথি খতিয়ে দেখা ছাড়াও গাড়ির মালিকদের চিঠি পাঠিয়ে ডেকে আনা হচ্ছে। রাস্তাতেও ওই সব গাড়ির ধরপাকড় চলছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর অথবা মামলাজনিত জরিমানা ফাঁকি দিতে ভিন্ রাজ্যের বেসরকারি স্বয়ংক্রিয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে গাড়ির শংসাপত্র তৈরি করে আনার অভিযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র গাড়ির ছবি পাঠিয়ে ওই কাজ করা হয়েছে। ওই সব গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পরীক্ষা না হওয়ায় রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা।
ওই সব গাড়ি চিহ্নিত করার পরে কাগজপত্রের অনিয়ম খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পরিবহণ দফতর। প্রয়োজনে ওই সব গাড়ির শংসাপত্র বাতিল করে নতুন করে তা পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই সব খাতে রাজ্য সরকারের জরিমানা বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে সূত্রের খবর।