• বিধি ভেঙে লাইন পেরোতে হয় রেল পুলিশকেই, থানা সরাতে উদ্যোগ
    আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • লেভেল ক্রসিং ছাড়া অন্য কোথাও দিয়ে রেললাইন পারাপার করা রেলের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সেই লাইন পেরিয়েই শুধু নয়, রেলওয়ে ট্র্যাক ধরে হেঁটে রেল পুলিশ থানায় যেতে হয় পুলিশকর্মীদের। আবার রেললাইন পারাপারের মতো এই বেআইনি কাজ করতে হবে বলেই রেল পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা বালিগঞ্জ জিআরপি-র ওই থানায় সাধারণত আসেন না। ওই থানা রয়েছে রেলের জমিতে। রেললাইন পেরিয়েই সেখানে পৌঁছতে হয়। রেলের কাছে নতুন থানার জন্য জায়গা চাইলেও এখনও তা মেলেনি। এ বার তাই রেলের এলাকা ছেড়ে স্টেশনের কাছে অন্যত্র রেল পুলিশের বালিগঞ্জ থানা সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন রাজ্য রেল পুলিশের কর্তারা।

    সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই রেল পুলিশের তরফে কলকাতা পুলিশের আধিকারিকদের বলা হয়েছে, বালিগঞ্জ স্টেশনের কাছে কোনও ভাড়া বাড়ি কিংবা সরকারি ভবন থাকলে তাদের জানাতে। যাতে সেখানে বালিগঞ্জ জিআরপি থানা স্থানান্তরিত করা যায়। যদিও বাড়ি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে রেল পুলিশের আরোপিত শর্ত নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে রেল পুলিশেরই একাংশ জানিয়েছেন। রেল পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী, তারা বাড়ি ভাড়া নিলেও অগ্রিম বাবদ কিছু দিতে পারবে না। কিন্তু অগ্রিম বাবদ কিছু না পেলে মালিকদের অধিকাংশই বাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছেন না। এ দিকে, সরকারি নিয়মে অগ্রিম ভাড়া দেওয়ার উপায় নেই।

    রেল পুলিশের এক কর্তা জানালেন, দ্রুত এই জট কাটানোর চেষ্টা চলছে। রেলের জায়গা না মেলায় নতুন বাড়ি খুঁজে সেখানে বালিগঞ্জ জিআরপি থানা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আর বর্তমানে যে বাড়িতে থানা রয়েছে, সেখানে আউটপোস্ট করা হবে বলে তিনি জানান। রেল পুলিশের ওই কর্তা আরও জানান, রেললাইন পার হতে হয় বলেই তাঁরা ওই থানায় যাওয়ার বিষয়টি সাধারণত এড়িয়ে যান।

    বালিগঞ্জ রেল পুলিশ থানার অধীনস্থ এলাকা পার্ক সার্কাস থেকে বজবজ পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই এলাকার ১২টি স্টেশন এবং সমস্ত ট্রেনেরনিরাপত্তা দেখতে হয় বালিগঞ্জ জিআরপি-কে। বালিগঞ্জ রেল পুলিশের থানাটি চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের একেবারে শেষে, রেললাইনেরধারে। সেখানে পৌঁছতে হলে রেল পুলিশকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ, সবাইকেই রেললাইন ধরে হেঁটে গিয়ে বেআইনি ভাবে লাইন পেরোতে হয়। যা রেলের চোখে দণ্ডনীয় অপরাধ। দিনের পর দিন এ ভাবে রেলের আইন লঙ্ঘন করতে হচ্ছে খোদ রেল পুলিশকেই।

    রেল পুলিশ সূত্রের খবর, এই সমস্যা দূর করতেই রেলকে থানা সরানোর জন্য নতুন জায়গা দিতে বলা হয়েছে। রেল এখনও তা দিতে পারেনি। শুধু রেললাইন পেরিয়ে যাতায়াতই নয়, বৃষ্টি হলেই হাঁটুজল জমে যায় ওই থানার ভিতরে। যা নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয় পুলিশকর্মীদের। এই কারণে রাতের দিকে ওই থানায় কেউ অভিযোগ জানাতে যেতে পারেন না বলে দাবি রেল পুলিশকর্মীদের।

    এর পাশাপাশি, দূরত্বের কারণে বালিগঞ্জ থেকে বজবজ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার দেখাশোনা করতেও সমস্যা হচ্ছে বালিগঞ্জ রেল পুলিশের। তাই এই সমস্যা দূর করতে মাঝেরহাট স্টেশনে নতুন একটি পুলিশ ফাঁড়ি তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে রেল পুলিশের তরফে। ওই ফাঁড়ি তৈরি হলে আক্রা, সন্তোষপুর, বজবজের মতো স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখাশোনা করতে সুবিধা হবে বলে রেল পুলিশের কর্তাদের দাবি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)