• নির্বাচকদের ভাবনায় থাকছেন ‘নতুন’ শামি
    আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নেভিল কার্ডাস যে বলেছিলেন, স্কোরবোর্ড একটি গাধা, এমনি-এমনি বলেননি। সদ্য শেষ হওয়া পূর্বাঞ্চল বনাম উত্তরাঞ্চল দলীপ ট্রফি ম্যাচের স্কোরবোর্ড যেমন বলছে, দুই ইনিংসে তাঁর বোলিং হিসাব এ রকম: ২৩-৪-১০০-১ এবং ১১-১-৩৬-০। এবং ডাহা মিথ্যা কথা বলছে।

    ঘটনা হচ্ছে, মহম্মদ শামি যতই তাঁর প্রত্যাবর্তন ম্যাচে নামমাত্র উইকেট ঝুলিতে নিয়ে ফিরুন, জাতীয় নির্বাচকেরা নতুন রূপের পুরনো শামির ঝলক দেখে যথেষ্ট প্রভাবিত। প্রত্যাবর্তন ম্যাচেই ভারতীয় ফাস্ট বোলিংয়ের বড়ে নবাব প্রমাণ করে দিতে পেরেছেন, এখনও অনেক ক্রিকেট তাঁর মধ্যে বাকি আছে। ভারতীয় দলের জার্সি এখনই অতীত হয়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।

    নতুন রূপের পুরনো শামি ব্যাপারটা কী? নতুন রূপ কারণ অন্তত সাত-আট কিলো ঝরিয়ে তিনি দলীপে খেলতে এসেছিলেন। বরাবর যাঁর বিরিয়ানি প্রেম নিয়ে নানা কটাক্ষ করা হয়েছে, তাঁর এমন মেদহীন, ঝরঝরে চেহারা দেখে অনেকে বিস্মিত হয়ে গিয়েছেন। অবশ্য কারও কারও পাল্টা মত, শামি রুটি-পরোটা খেয়ে বড় হয়েছেন, এখনও বল সাঁ সাঁ করে ছুটছে। তরুণ প্রজন্ম সকালে অ্যাভোকাডো খেয়ে মাঠে আসছে, বল পৌঁছচ্ছে না। আর পুরনো ঝলক বলতে বোলার শামির সেই তেজ। নির্বাচকেরা দু’টো ব্যাপার দেখে সব চেয়ে উত্তেজিত। সাড়ে পাঁচ মাস পরে ক্রিকেটে ফিরেও তিনি যথেষ্ট জোরে বল করেছেন, গতি হারাননি। এবং, বোলিং শিল্পেও মরচে ধরেনি। সিমের ব্যবহারে বহু বার ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করেও উইকেট পাননি। যা স্কোরবোর্ড নামক গাধার পিঠে লেখা থাকছে না। কিন্তু নির্বাচকদের খাতায় উঠে গিয়েছে এবং সন্দেহ নেই, ভারতীয় দলে শামির প্রত্যাবর্তন আকাশকে উজ্জ্বল করে তুলবে। দলীপে পূর্বাঞ্চলের হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিরুদ্ধে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৪ ওভার বল করেছেন, যার অর্থ চোট সারিয়ে ফিরে ধকলও নিতে পারছেন। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, চোট-আঘাতে জর্জরিত ভারতীয় ফাস্ট বোলিং। বুমরা অনিয়মিত, প্রসিদ্ধ-আকাশ দীপও চোট পেয়েছেন, সিরাজ না একা হয়ে পড়েন! এই অবস্থায় শামিকে এখনই হারাতে চায় না কেউ।

    শামির দলীপ-পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই বেঙ্গালুরুতে শুরু হয়ে যায় ভারতীয় দলের নতুন ফিটনেস অভিযান। যেখানে প্রধান চরিত্র আবার রোহিত শর্মা। নতুন চালু হওয়া ব্রঙ্কো টেস্টের মাধ্যমে রোহিত-সহ একাধিক ভারতীয় ক্রিকেটারের ফিটনেস যাচাই করা হল। শামির মতো রোহিতও ওজন কমিয়ে, মেদ ঝরিয়ে অনেক ফিট অবস্থায় বেঙ্গালুরুতে পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন। খাওয়াদাওয়ায় শৃঙ্খলা এনেছেন, অনেক বেশি ট্রেনিং করছেন। যা ইঙ্গিত, ব্রঙ্কো টেস্টে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কারও কারও পর্যবেক্ষণ, গম্ভীর জমানায় ক্রিকেটারেরা এখন সাবধানী। গুরু গ্রেগের আমলে সৌরভ, সহবাগদের যেমন হতে হয়েছিল। ফিটনেস নেই, এই অস্ত্র কারও হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।

    অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে সিরিজ়ে রোহিত যে নিশ্চিত, লিখে দেওয়া যায়। অধিনায়কের পদ থেকে কী করে তাঁকে সরানো সম্ভব, এমন প্রশ্নও উঠছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে আসা অধিনায়ককে কী করে অপসারণ করা যায়? মনে রাখতে হবে ফাইনালেও ৭৬ করে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি। শুভমন গিলকে সব ধরনের ক্রিকেটে অধিনায়ক করার কথা ভাবা হচ্ছে ভাল কথা, কিন্তু তার জন্য তো এত অবদান থাকা কাউকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়া যায় না!

    যশপ্রীত বুমরার ফিটনেস পরীক্ষা নিয়েও উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানা গিয়েছে। বুমরা এশিয়া কাপে খেলবেন। ভারতীয় ফাস্ট বোলিংয়ের নতুন উদিত সূর্য মহম্মদ সিরাজ এশিয়া কাপে নেই, তবে তিনিও বেঙ্গালুরুতে পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছেন বলে খবর। সবাইকেই এই ব্রঙ্কো টেস্ট দিতে হবে, যা অতীতের ইয়ো-ইয়ো থেকেও কড়া। তিনি বিরাট কোহলি— কোথায়? বেঙ্গালুরুতে এলেন নাকি? কোহলি লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন বলে শোনা যায়নি। তবে বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেল, বোর্ডের অনুমতি নিয়ে ইংল্যান্ড থেকেও ব্রঙ্কো টেস্ট দিয়ে থাকতে পারেন কোহলি। বোর্ডের ফিজিয়ো, ট্রেনারদের সাহায্যে এই আয়োজন করা সম্ভব।

    আপাতত অবশ্য দলীপ ট্রফি নিয়ে বোর্ডের দায়সারা মনোভাব বেশ নিন্দিত হচ্ছে। বেঙ্গালুরুতে যে রকম বাইশ গজে খেলা হচ্ছে, বোলারদের জন্য মরুভূমি। এখন চার বা পাঁচ দিনের ম্যাচেও এত বেশি ফয়সালা হয়। পুরনো আমলের মতো প্রথম ইনিংসের ফলাফলের ভিত্তিতে জেতা-হারার নিষ্পত্তি প্রায় দেখাই যায় না। সেখানে দলীপে দুই ইনিংস শেষ করা যায়নি। অস্ট্রেলিয়া থেকে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে চাবকানি খেয়ে ফেরার পরে ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে দেশাত্ববোধক সব বিবৃতি ঝরে পড়ছিল। তারকা, মহাতারকাদের বলা হল, যাও গিয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলো। রাতারাতি আবার যে কে সেই। দলীপ সরাসরি সম্প্রচার করার কথাও ভাবেনি বোর্ড। বিতর্ক হওয়ায় চাপে পড়ে এখন জানিয়েছে, ফাইনাল দেখানো হবে।

    তা-ও রক্ষে যে, জাতীয় নির্বাচকেরা অন্তত ম্যাচ দেখলেন। শামির উইকেট সংখ্যা যা-ই থাকুক, নির্বাচকেরা নিজেদের চোখে দেখে নিলেন, সাড়ে পাঁচ মাস মাঠের বাইরে থাকলেও তিনি বিশেষ কিছুই হারাননি। যদিও পূর্বাঞ্চল বিদায় নেওয়ায় দলীপে আর ম্যাচ পাবেন না তিনি। তা হলে আবার কবে শামিকে ম্যাচ খেলতে দেখা যাবে? ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে খেলবে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দল। ভারতীয় ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে তাদের দু’টি টেস্ট ও তিনটি ওয়ান ডে রয়েছে। যদি নির্বাচকেরা মনে করেন, অক্টোবরে শামিকে অস্ট্রেলিয়ায় সাদা বলের সফরে নিয়ে যাবেন, তা হলে ‘এ’ দলের হয়ে দু’একটি ওয়ান ডে খেলিয়ে দেখে নেওয়ার দরজা খোলা থাকছে। অস্ট্রেলিয়ায় ভারত খেলবে তিনটি ওয়ান ডে ও পাঁচটি টি-টোয়েন্টি। প্রথম ওয়ান ডে ১৯ অক্টোবর। শামি যদি অস্ট্রেলিয়া সফরে সুযোগ পেয়ে যান, তা হলে অন্য কথা। না পেলে বাংলার হয়ে ১৫ অক্টোবর থেকে উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে প্রথম রঞ্জি ম্যাচে খেলবেন।

    অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে এখন থেকেই প্রবল আগ্রহ। তার কারণ ভারতের জার্সিতে ফের দেখা যাবে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাকে। তাঁরা শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন গত ৯ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে। সাত মাস অপেক্ষা করতে হবে রো-কো জুটিকে ব্যাট হাতে দেখার জন্য, এমন দিন এত দ্রুত এসে পড়বে, কে ভেবেছিল!
  • Link to this news (আনন্দবাজার)