• ‘গান ছাড়তে বারণ করেছিলেন, কাকুর কথা রাখলাম না, ভাল শিষ্যাও হতে পারলাম না’
    আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়

    গতকাল থেকে অপরাধবোধে ভুগছি, যত বার অভিকাকু মানে অভিরূপ গুহঠাকুরতার মুখ মনে পড়ছে। আমার কণ্ঠে কাকু ‘আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে’ গানটি বারে বারে শুনতে চাইতেন। কেন জানি না, ওঁর শুনে আরাম, আমার গেয়ে। গান শুনতে শুনতে চোখ দুটো জলে ভরে উঠত। কাঁপা কাঁপা গলায় বলতেন, “গানটা তুই ছাড়িস না।” কাকুর সে কথা রাখতে পারি নি। নানা কারণে, সময়ের অভাবে, অতি ব্যস্ততায় সকলের আগে গানটাই ছেড়ে দিয়েছি!

    চিরনিন্দ্রায় শায়িত অভিকাকুর মুখ দেখতে দেখতে কেবলই মনে হচ্ছিল, কাকুর কথা রাখলাম না। আমি ভাল শিষ্যা হতে পারলাম না!

    অভিরূপ গুহঠাকুরতা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক প্রতিষ্ঠান। ওঁর প্রয়াণে যেন একটি যুগের শেষ। ওঁর মতো করে গাইতে আর শেখাতে কাউকে দেখলাম না! কী যে দরদ। গানের প্রত্যেকটি কথা বুঝে বুঝে গাইতেন। যে গানে আবেগ বেশি, দরদ বেশি— সেই গান ওঁর কণ্ঠে কী দারুণ শোনাত! এই মানুষটিই শচীন দেববর্মনের গান অসাধারণ গাইতেন। তাঁর তখন অন্য মেজাজ।

    আরও পড়ুন:
    test
    আমি শুধুই নচিকেতার হয়ে থাকব, এ রকম কোনও দিন চাননি! গায়কের জন্মদিনে অজানা গল্পে শুভমিতা
    কাকুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঠিক মন্দিরের মতো। সকলে মিলে বসে গাইতাম। নিছক গেয়ে যাওয়া নয়। ওঁর তত্ত্বাবধানে প্রত্যেকটা গান জীবন্ত হয়ে উঠত। সম্ভবত ১৯৯০ সাল। রবীন্দ্রসদন। বহুবার শোনা একটি গান, নতুন করে শুনেছিলাম ওঁর কণ্ঠে, ‘তোমার কাছে এ বর মাগি মরণ হতে যেন জাগি গানের সুরে’। কী আবেগ, নম্রতার সে কী আর্তি! যেন কোন গভীরে ডুবে গিয়ে এক আত্মসমর্পণ। ওই গান শোনার পরেই মাকে বলেছিলাম, এঁর কাছে গান শিখব। মা নেই। কাকুও চলে গেলেন।

    আমার গাওয়া তোমার প্রিয় গান তোমার জন্যই রইল, অভিকাকু। তোমাকেই উৎসর্গ করলাম আজ। চাঁদের দেশে গিয়েও তুমি গানের সুরে রয়েই গেলে। যখনই রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজবে চোখ বুজলেই আমি তোমায় দেখতে পাব।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)