• 'আমি ক্রাইম পেট্রোল দেখি, অংশ হতে চাইনি', রোজকার মত মেট্রো চেপে বাড়ি ফিরছিলেন তরুণী, এরপর যা অভিজ্ঞতা হল, জানলে চমকে উঠবেন আপনিও ...
    আজকাল | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও মেট্রোতে চাঞ্চল্যকর ঘটনা৷ এক তরুণীর নিয়মিত মেট্রো যাত্রা অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। মেট্রোয় যাত্রাকালীন এক পুরুষ যাত্রীকে সামান্য 'ধন্যবাদ' জানানোর জেরে ঘটনার মোড় যে একেবারে পাল্টে যেতে পারে তা তরুণী নিজেও ভাবতে পারেননি। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ওই তরুণী রেডিট-এ শেয়ার করে জানিয়েছেন। সেখানে তিনি জানান, কীভাবে একটি সাধারণ ভদ্রতা তাঁর জন্য মুহূর্তে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

    ঘটনার সূত্রপাত কলেজ শেষে তরুণীর দিল্লি মেট্রোতে চড়ার পর। তিনি জানিয়েছেন, রোজকার মত তিনি দরজার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কারণ তাঁকে ট্রেন পরিবর্তন করতে হত। এমন সময় কয়েকজন পুরুষ যাত্রী মেট্রোতে উঠে পড়েন। তাঁদের মধ্যে একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি তাঁর একদম পাশে দাঁড়ান এবং আরেকজন খুব কাছাকাছি এসে তাঁর জায়গা প্রায় আটকে দেন।

    তরুণী লিখেছেন, 'ওঁদের মধ্যে একজন তাঁর বন্ধুর সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলার জন্য এতটা পিছিয়ে এসেছিল যে তাঁর পিঠ প্রায় আমার নাকের সামনে এসে দাঁড়ায়। এটা যদিও অস্বস্তিকর ছিল, তবে মেট্রোতে খুবই ভিড়র ছিল বলে আমি ওটা সামলে নিয়েছিলাম। ভাবলাম, মাত্র দুটো স্টেশনের জন্য তো, সহ্য করে নিই।'

    এরপর ঘটনা মোড় নেয়। তিনি অনুভব করেন, তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ব্যক্তি অন্য একজনকে ধাক্কা দিচ্ছেন যেন তাঁকে 'রক্ষা' করার চেষ্। তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে ওই ব্যক্তি সত্যিই সাহায্য করতে চায়ছেন নাকি এটি সম্পূর্ণ অস্বস্তিকর কোনও পরিস্থিতি তৈরী হতে চলেছে। এহেন অস্বচ্ছতার মধ্যেও, তরুণী সেই ব্যক্তিকে 'ধন্যবাদ' জানান। তিনি ভেবেছিলেন, ভবিষ্যতে যদি কোনও মহিলা সত্যিই বিপদে পড়েন, তাহলে যেন সাহায্যকারী পুরুষদের মহিলারা অকৃতজ্ঞ না ভাবেন। 

    কিন্তু 'ধন্যবাদ' বলার পরই ঘটনাটি এক ভয়ের দিকে মোড় নেয়। তরুণী ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে থাকলে, সেই ব্যক্তি তাঁর পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকেন। তরুণী দ্রুত হাঁটতে থাকলেও তিনি থামেন না। কিছুক্ষণ পর একটি আইডি কার্ডের গোছা দেখিয়ে বলেন, এরা তাঁর ছাত্র, এবং তিনি নিজেকে একজন সাংবাদিক বা লেখক হিসেবে পরিচয় দেন। নিজস্ব একটি কার্ডও দেখান। এরপর তরুণী জানান, তিনি এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি কার্ড ভালো করে দেখেনইনি।

    পরবর্তীতে অভিযুক্ত ব্যক্তি তরুণীর বাসার ঠিকানা জানতে চান। তরুণী মিথ্যা একটি স্টেশনের নাম বলেন। এরপর ব্যক্তি বলেন, 'আপনি কলেজ স্টুডেন্ট, না? প্রতিদিন এই সময়ে এই পথেই যাতায়াত করেন?' তরুণী বলেন, 'না।' তখন তিনি বলেন, 'আপনার নম্বর দিন, কল করে কথা বলব, বন্ধুরা যেমন করে। ' তরুণী স্পষ্টভাবে না বলে দেন।

    তরুণী তাঁর পোস্টে লেখেন, 'আমি ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখতে ভালোবাসি, কিন্তু ওর মধ্যে অভিনয় করতে চাই না। আমি বলছি না যে কারওর নম্বর চাওয়া ভুল, কিন্তু একজন চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষের কোনও অধিকার নেই একটি ২২ বছর বয়সী যুবতীর কাছে এমন ভাবে চাওয়ার।'

    তিনি আরও জানান, 'আমি সত্যিই তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যাঁরা বিপদে পাশে দাঁড়ান, তাই যদি আমার কথায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমি দুঃখিত। তবে ওই পরিস্থিতিতে আমি খুবই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম।'

    রেডিট-এ অনেকেই এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানান। একজন লেখেন, 'এটা পড়ে মিশ্র অনুভূতি হলো, শুরুতে ৬ ফুট লম্বা ছেলেরাই ভিলেন ছিল। কিন্তু শেষে ‘ধন্যবাদ’ বলেই ‘আঙ্কেল’ সিম্পে পরিণত হলেন।'

    আরেকজন লেখেন, 'আমি দুঃখিত, এখন বুঝতে পারছি কেন মেয়েরা মেট্রোতে মুখ ঢেকে বসে থাকে। এমন অভিজ্ঞতা খুবই ভয়ঙ্কর।'

    আরেকজন বলেন, 'লোকটা এতগুলো আইডি কার্ড নিয়ে কী করছে? ও কি স্টকার? আর আপনি না চাইলেও কেন সে নম্বর চাইলো?' অন্য একজন মন্তব্য করেন, 'আমার বাবা-ও আমার বোনকে বলেন কারও সঙ্গে অযথা ‘থ্যাংক ইউ’ বা ‘বাই’ না বলার জন্য। রুড শোনালেও আমাদের সমাজ এখনও ভদ্রতায় অভ্যস্ত না।'

    অন্য একজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী জানান, যখন তিনি ১৭ বছর বয়সী ছিলেন, ট্রেনে এক পুরুষ যাত্রী তাঁর হোস্টেলের লোকেশন জেনে যান এবং পরে একই অটোতে যেতে জোর করেন। ওই সময় তিনি খুব ভয় পেয়ে যান এবং বলেন, 'আমার বাবা অনুমতি দেবেন না।' তারপর দ্রুত নিজের কামরায় ফিরে যান।

    সাম্প্রতিককালে এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে মহিলাদের প্রতিদিনকার বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সামান্য সৌজন্যতা কখনও কখনও তাঁদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। তরুণী তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করেছেন - ভদ্রতা আর সীমালঙ্ঘনের মাঝের সূক্ষ্ম পার্থক্য নিয়ে।
  • Link to this news (আজকাল)