এলিটা গার্ডেন ভিস্তার বহুতল ভাঙার নির্দেশ বহাল, হাইকোর্টে টিকল না প্রোমোটারদের যুক্তি
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কলকাতা হাই কোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ নিউ টাউনের এলিটা গার্ডেন ভিস্তা প্রকল্পের অবৈধভাবে নির্মিত ১৬ নম্বর টাওয়ার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। প্রকল্পের প্রোমোটাররা ভাঙার নির্দেশ ঠেকাতে নানা যুক্তি পেশ করলেও আদালত সেগুলি খারিজ করে জানিয়েছে, টাওয়ারটির নির্মাণ অবৈধ এবং এটি অন্য ১৫টি টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিকদের জমির অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
মার্লিন গ্রুপের সুশীল মোহতা, সুরেকা গ্রুপের প্রদীপ সুরেকা এবং জেবি গ্রুপের প্রকাশ বাচাওয়াত যৌথভাবে এই প্রকল্পটি নির্মাণ করেছিলেন। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। আদালতে সিনিয়র অ্যাডভোকেট অভ্রজিৎ মিত্র প্রোমোটারদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেন যে, বহু সময় কেটে গিয়েছে, বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে এবং ১৬ নম্বর টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিকদের অধিকার তৈরি হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, টাওয়ারের অনুমোদিত নকশা রয়েছে, এর গঠনগত বৈধতা অক্ষুণ্ণ এবং বিক্রয় চুক্তি অনুযায়ী বর্তমান ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতি ছাড়াই প্রোমোটারের অতিরিক্ত নির্মাণ করার অধিকার ছিল। আদালত এই সমস্ত যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, সময় পেয়ে গিয়েছে, এই যুক্তি কোনো অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করতে পারে না। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট রায় আছে।
বিচারপতিরা স্পষ্ট করে দেন, এই ক্ষেত্রে মূল সমস্যা কাঠামোগত নয়, বরং অন্য ১৫ টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিকদের অবিভক্ত জমির অংশ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৩০০এ অনুচ্ছেদ অনুসারে কারও সম্পত্তির অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না, যদি না কোনো আইন তার অনুমতি দেয়। এনকেডিএ-র এমন কোনো আইন তৈরি করার ক্ষমতা নেই, যাতে ফ্ল্যাট মালিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সেখানে নতুন কোনও নির্মাণ করা যাবে। ফলে জমির মালিকদের সম্মতি ছাড়া ১৬ নম্বর টাওয়ার নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে আরও বলা হয়, ১৫ টাওয়ারের মালিকদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার রয়েছে, কিন্তু ১৬ নম্বর টাওয়ারের মালিকদের সেই অধিকার নেই, কারণ অবৈধভাবে বলপ্রয়োগ করে ওই বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। সহানুভূতির জায়গা থাকলেও তা কোনোভাবেই অবৈধতার সুরক্ষা দিতে পারে না। তাছাড়া ১৬ নম্বর টাওয়ার তৈরি করতে যেভাবে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে সহানুভূতির প্রশ্ন এখানে ওঠে না। আদালত এ-ও জানায়, প্রোমোটাররা প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ক্রেতাদের জানাননি। জয়ন্তীলাল ইনভেস্টমেন্ট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে যে, ক্রেতাদের কাছে প্রোমোটারকে সমগ্র পরিকল্পনার কথা জানাতে হবে। কিন্তু ১৬ নম্বর টাওয়ার সম্পর্কে পূর্বের ফ্ল্যাট মালিকদের না জানানো বিক্রয়চুক্তিকে অবৈধ করেছে, যা ট্রান্সফার অফ প্রপার্টি অ্যাক্ট এবং কন্ট্রাক্ট অ্যাক্ট—দুটিরই লঙ্ঘন।
খোলা জায়গা নিয়ে প্রোমোটারদের যুক্তিকেও আদালত খারিজ করে দেয়। প্রোমোটাররা দাবি করেছিলেন, খোলা জমির ভাগ কমলেও বাসিন্দাদের জন্য অতিরিক্ত সাধারণ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। আদালত স্পষ্ট জানায়, খোলা জমির ভাগ কেড়ে নেওয়া কোনোভাবেই বাড়তি সুবিধা দিয়ে পূরণ করা যায় না। বাসিন্দাদের অবিভক্ত জমির অধিকার লঙ্ঘন করে কোনো চুক্তি বৈধ হতে পারে না।
এই রায়ে প্রোমোটাররা বড় ধাক্কা খেলেন। একই সঙ্গে ১৬ নম্বর টাওয়ারে ফ্ল্যাট কিনে বসবাসকারী বাসিন্দাদের জন্যও এটি এক গুরুতর বিপর্যয়। আদালত তাঁদের দুরবস্থা স্বীকার করলেও জানিয়ে দেয়, অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করার কোনো উপায় নেই। এর ফলে নিউ টাউনের এই বিতর্কিত টাওয়ার ভেঙে ফেলার পথ প্রায় নিশ্চিত