• কর্মসূচির জন্য মোদীবাবুর অনুমতি নেব না: মমতা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ভাষাসন্ত্রাসের প্রতিবাদে মেয়ো রোডে তৃণমূলের ধরনা কর্মসূচি চলছিল। সোমবার দুপুরে আচমকাই সেনার তরফে ওই মঞ্চ খুলে দেওয়া শুরু হয়। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যান খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমাররা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছোনো মাত্র মঞ্চ খোলা বন্ধ করে দেয় সেনা। সেখান থেকেই এই সামগ্রিক ঘটনার প্রতিবাদে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিলেন ক্ষুব্ধ মমতা। মঙ্গলবার রাজ্যের প্রতি জেলার, প্রতি ওয়ার্ড, প্রতি ব্লকে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হবেন তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। সেই সঙ্গে বিকল্প জায়গা হিসেবে রানি রাসমণি রোডের কথা জানালেন তিনি।

    ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাইকের কানেকশন কেটে দিয়েছে, স্টেজ ভেঙে দিয়েছে, আর্মিকে দিয়ে মঞ্চ খুলিয়েছে। আমার আর্মির বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই। কারণ আমরা সেনাকে নিয়ে গর্বিত। কিন্তু সেনাকে যখন বিজেপির কথায় চলতে হয়, তখন দেশটা কোথায় যায়, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে। বিজেপির হাতের পুতুল হয়ে নোংরা খেলায় নামবেন না। বাকি সব এজেন্সি তো কেন্দ্রের ললিপপ, সেনাকেও ছাড়ল না।’ মমতা আরও জানান, তৃণমূলের এই কর্মসূচির জন্য কোনও রাস্তা বন্ধ নেই। শনি এবং রবিবার কর্মসূচি হয়। তার জন্য অনুমতিও নেওয়া ছিল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দরকার হলে পুলিশের সঙ্গে কথা বলত। পুলিশ আমাদের দলের সঙ্গে কথা বলে মঞ্চ খুলে দিতে পারত। কোথাও কোনও আপত্তি থাকলে আমি এক মিনিটের মধ্যে মঞ্চ খুলে দিতাম, অন্য জায়গায় শিফ্‌ট করতে পারতাম।’ সেনার তরফে এই মঞ্চ খোলা হলেও এর নেপথ্যে বিজেপির ইন্ধন থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত মমতার।

    মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিনি যখন গান্ধীমূর্তির পাদদেশে পৌঁছোন, প্রায় ২০০ জন সেনাকর্মী তাঁকে দেখে ছুটে পালাচ্ছিলেন। পরে এ বিষয়ে মন্তব্যের সময়ে সেনার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এটা আপনাদের দোষ নয়। আপনারা বিজেপির কথায়, দিল্লির কথায় কাজ করেছেন। দিল্লির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কথায় করেছেন। এটুকু বুদ্ধি আমাদের আছে। আমরা সেনাকে দোষ দিচ্ছি না। আমরা বিজেপি ও তাদের মন্ত্রীকে দোষ দিচ্ছি।’ রাজনৈতিক দলের মঞ্চ ভাঙতে সেনাকে অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘সরি টু সে, এটা আর্মি নয়, পিছে মে ক্যায়া হ্যায়? ছুপা রুস্তম বিজেপি হ্যায়!’ মমতার কথায়, ‘ভাষাসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও জোরদার হবে। রানি রাসমণি রোডে অনুমতি নিয়ে প্রতিবাদ হবে। মঙ্গলবার থেকে সেখানেই চলবে ধরনা।’ এরপরেই তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘বেশি করে বাংলায় কথা বলুন। দেখতে চাই ভাষাসন্ত্রাস কোথায় গিয়ে পৌঁছোয়। বিজেপি এভাবে যত অত্যাচার করবে, ততই দেশ থেকে মুছে যাবে।’

    তবে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন মঞ্চ খোলা হল? সেনার তরফে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ময়দান এলাকায় দু’দিনের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই এলাকায় তিন বা তার বেশি দিনের অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমতি নিতে হয়। সেনার এই বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে মমতার পাল্টা দাবি, ‘মোদীবাবুর (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) থেকে অনুমতি নিয়ে আমাকে কর্মসূচি করতে হবে না। আমি মানুষের থেকে অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি করব। বিজেপি যখন বাইরে থেকে এসে অনুষ্ঠান করে, আমরা এমনিই জায়গা দিয়ে দিই। এটা সৌজন্য।’ সেনার দাবি, দু’দিনের অনুমতি থাকলেও ময়দান এলাকায় মঞ্চটি প্রায় এক মাস ধরে বাঁধা ছিল। অস্থায়ী ওই কাঠামো সরিয়ে দেওয়ার জন্য আয়োজকদের বেশ কয়েক বার জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও তা সরানো হয়নি। কলকাতা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তারপরেই ভারতীয় সেনা মঞ্চ সরানোর কাজ শুরু করেছে। এর প্রেক্ষিতে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘এ সব বাজে কথা।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)