শ্রীকান্ত ঠাকুর: দক্ষিণ দিনাজপুরে বাল্যবিবাহ রোধে জোর প্রচার, তবু বাড়ছে কমবয়সী মাতৃত্ব। ২০২৫ সালের মধ্যে জেলাকে সম্পূর্ণ বাল্যবিবাহ মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহর সর্বত্র চলছে ব্যাপক প্রচার অভিযান। এই প্রচারের কাজে মাঠে নামানো হয়েছে আশা কর্মী, সখী-সাহেলি, কন্যাশ্রী ক্লাব ও কন্যাশ্রীর সদস্যাদের। তবুও প্রশাসনের একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাল্যবিবাহ।
ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথরিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৪১টি বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে বেসরকারি মহলের দাবি, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। তাদের মতে সরকারি পরিসংখ্যান কেবলমাত্র "হিমশৈলের চূড়া"। প্রশাসনিক নথিই প্রমাণ করছে, জেলায় কমবয়সী মাতৃত্বের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সমর্থিত সূত্রের দাবি, রাজ্যের নিরিখে দক্ষিণ দিনাজপুর এই ক্ষেত্রে একেবারে উপরের সারিতে রয়েছে। প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে গোপনে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠছে।
বিগত কয়েক মাসে তপন গ্রামীণ হাসপাতাল, হিলি গ্রামীণ হাসপাতাল ও বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ১৫ বছরের কম বয়সী একাধিক কিশোরীর মাতৃত্বের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—কেন এত সরকারি প্রকল্প, নজরদারি ও প্রচার অভিযান সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিবাহ?
জেলা শাসক জানিয়েছেন, আগের তুলনায় প্রচার আরও বাড়ানো হয়েছে এবং নাগরিকদের সচেতন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত। তাঁর দাবি, যত অভিযোগ প্রশাসনের কাছে আসছে, তা আসলে মানুষের সচেতনতারই প্রমাণ। কিন্তু সমাজকর্মীদের মতে, সমস্যার মূলে রয়েছে অন্য কারণ। আধুনিক প্রযুক্তি, অল্পবয়সে দামি মোবাইলের ব্যবহার, অচেনা মানুষের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ এবং পালিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা বাল্যবিবাহের হার বাড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, বিজেপির অভিযোগ—প্রশাসনের প্রচার অভিযানে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের আধিপত্য রয়েছে। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ সেই প্রচারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাঁদের দাবি, সকল রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন গণসংগঠন এবং স্থানীয় ক্লাব সদস্যদের একত্রিত করে নিরপেক্ষভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করা উচিত।সবমিলিয়ে, দক্ষিণ দিনাজপুরে বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসনিক তৎপরতা থাকলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে লক্ষ্যপূরণ এখনো অধরা। তবে প্রশাসনের দাবি, দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা ও যৌথ উদ্যোগই একদিন জেলাকে সম্পূর্ণ বাল্যবিবাহমুক্ত করবে।