• ফের মঞ্চ মাতিয়ে দিল অগ্নিগর্ভ নকশালবাড়ির ইতিহাস
    এই সময় | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • মানুষ স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে একদল মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েন ভয় ও সংশয়কে সঙ্গী করে। সেখানে স্পর্ধা-ই শেষ কথা। চন্দন সেনের নাটকে তারই পরিণতি ‘প্রাচ্য’-র নতুন প্রযোজনা বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ’।

    প্রায় তিন বছর আগে চন্দন সেন এই নাটকটি লিখতে শুরু করেছিলেন। সেই নাটকটি মন দিয়ে শুনেছিলেন অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার ও নির্দেশক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই থেকেই চলছিল প্রস্তুতি।

    নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হতেই সাড়া পড়ে যায় দর্শকদের মধ্যে। উল্লেখ্য, ‘প্রাচ্য’ দলটির ১৮ বছর পূর্তির জন্মদিনে অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত হয়েছিল নাটকটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান, যার শিরোনাম ছিল ‘স্বপ্নে সত্যে মঞ্চ-ক্ষেত্রে নাছোড় ১৮’।

    নাট্যকার চন্দন সেন কৃষক বিদ্রোহের প্রকৃত ঘটনা এবং নকশাল আন্দোলন-সহ চারু মজুমদারের জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছেন তাঁর নাটকে। ১৯৬৭-এ কৃষকদের সামন্তবাদ-বিরোধী প্রতিরোধ সরাসরি রাষ্ট্রবিরোধী যুদ্ধের রূপ নেয়।

    পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল ৮ জন মহিলা সমেত দুটি নিষ্পাপ শিশু ও এক কিশোরকে। পরিণামে বাংলা জুড়ে কৃষক বিদ্রোহের ঢেউ উঠল। আন্দোলনের শেষ ভাগে চারু মজুমদারের মৃত্যুকেও দর্শকদের কাছে হাজির করিয়েছেন নাট্যকার।

    নির্দেশক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা বলছে, ‘ভারতীয় বামপন্থী, বিশেষ করে কমিউনিস্ট রাজনীতির নানা বাঁক, সেগুলিকে যথাসাধ্য এই নাটকে তুলে ধরা মূল উদ্দেশ্য ছিল। এ ছাড়াও ছিল সময়ের প্রাসঙ্গিকতা মেনে প্রয়োজনীয় আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা। সেগুলির ভূত-ভবিষ্যৎ আলোচনা এবং নাট্য ব্যক্তিত্বদের পরামর্শ নিয়ে সর্বশেষ পরিণতি-যতটুকু প্রয়োজন সেটাই নাটকের স্ক্রিপ্টে স্থান পেয়েছে।’

    এই নাটকের পিছনে রয়েছে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য। নাটকের তাগিদে বারবার শিলিগুড়ি ছুটে যাওয়া, চারু মজুমদারের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলা, এমনকী নাটকের প্রয়োজনে রাজবংশী গান প্রয়োগ করা যেন অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। যেমন, ‘নকশালবাড়ি চিঙ্গারি ফুটে/ কলকাতা ধান্দেকে উঠে....’।

    সুন্দর অভিনয় করেছেন কৌশিক ঘোষ, রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত চট্টোপাধ্যায়, অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়, প্রকাশ সিংহ রায়, শুভাশিস চক্রবর্তী, সাথী চক্রবর্তী, ঝুমুর সাহা প্রমুখ। নাটকটির বিশেষ ভূমিকায় রয়েছেন সুপ্রিয় দত্ত। নাটকের শেষেও যেন চারু মজুমদারের সেই উক্তি কানে বাজতে থাকে। ‘যে স্বপ্ন দেখে না, অন্যকে দেখাতে পারে না, সে কখনও বিপ্লবী হতে পারে না’। ইতিহাস ফিরে এল ক্ষণেকের জন্য।
  • Link to this news (এই সময়)