পশ্চিম মেদিনীপুরে সরকার নির্ধারিত মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি ধান চাষিরা
বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: দুর্গাপুজোর আগে ধানের দাম বাড়ায় চাষিদের মুখে চওড়া হাসি। এবারে ধানের সরকারি মূল্য ক্যুইন্টাল প্রতি ৬৯ টাকা বাড়ছে। অর্থাৎ এক ক্যুইন্টাল ধান বিক্রি করে চাষিরা পাবেন ২ হাজার ৩৬৯ টাকা। চাষিরা জানাচ্ছেন, এই মরশুমে ধানের উৎপাদন বাড়তে পারে। কারণ, বৃষ্টি হওয়ায় জলের ঘাটতি দেখা দেয়নি। একইসঙ্গে ধান বিক্রি করলে আগের চেয়ে বেশি টাকা পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যেই অনেক চাষি খাদ্যদপ্তরে ফোন করে ধান বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করছেন। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, নভেম্বর মাস থেকে ধান কেনার কাজ শুরু হবে। গত বছর জেলার ৮০ হাজার চাষি ধান বিক্রি করেছিলেন। এবছর সেই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। চাষিদের রেজিস্ট্রেশন করা শুরু হয়েছে। অনলাইনে চাষিরা নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। একইসঙ্গে এবারে মোবাইল ধান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে। যাতে প্রত্যন্ত এলাকার চাষিরা বাড়িতে বসেই ধান বিক্রি করতে পারেন। গত মরশুমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ধান কেনার টার্গেট ১০০ শতাংশ পূর্ণ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ধান কেনা হয়েছিল ২ লক্ষ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন।
এদিন জেলার খাদ্য নিয়ামক অরবিন্দ সরকার বলেন, ধানের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এরফলে সরকারি নিয়ম অনুসারে ধান বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে। ধান ক্রয়ের পরিমাণ বাড়াতে প্রশাসনের উদ্যোগে সারা বছরই নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। ধান কেনার নতুন টার্গেট খুবই শীঘ্রই চলে আসবে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার চাইছে কৃষি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে। সেই লক্ষ্যেই চাষিদের কাছে শস্যবিমা, কৃষক বন্ধু সহ নানা প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এরফলে একদিকে যেমন চাষের পরিমাণ বাড়ছে। অপরদিকে চাষিদের আর্থিক পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের এই জেলায় ধান চাষেও আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বছর ধরেই চাষিদের নানা ভাবে সহযোগিতা করায় ধানের উৎপাদন বাড়ছে। আগে অন্যান্য জায়গায় দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাতেন না। সেই কথা মাথায় রেখে ধানের দাম আরও বাড়ানো হল। আগে প্রতি এক কুইন্ট্যাল ধান বিক্রি করে ২ হাজার ৩০০ টাকা পেতেন চাষিরা। এছাড়া ধান ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেলে ২০ টাকা ছাড় দেওয়া হতো। এই সিজিনে ধানের দাম বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ৩৬৯ টাকা। পাশাপাশি ধান ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেলে ছাড়ও দেওয়া হবে চাষিদের।
প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, জেলায় স্থায়ী ধান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪টি। এছাড়া ৭টি মোবাইল ধান ক্রয় কেন্দ্র বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে ধান সংগ্রহ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন সমবায় সমিতি ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণে ধান কেনা হয়ে। চাষিরা জানাচ্ছেন, ধানের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। এরফলে সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করলে লাভ হচ্ছে। তবে ধান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। গত খরিফ মরশুমেও প্রচুর চাষি ধান বিক্রি করেছেন। ধান কেনার ক্ষেত্রে প্রথমে সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। পরে চাহিদা ও স্টকের কথা মাথায় রেখে তা রিভাইস করা হয়। শালবনী এলাকার চাষি নকুল দাস বলেন, ধান বিক্রির প্রক্রিয়া জটিল। এই প্রক্রিয়া আরও সহজ হলে উপকৃত হবেন চাষিরা। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফড়েরাজ অনেকটাই কমেছে।