• চুপিসারে কুরে কুরে খাচ্ছে মানুষের মগজ! চীন ছাড়িয়ে হু হু করে এদেশে ছড়াচ্ছে রোগ, এই রাজ্যে ভয়-উদ্বেগ
    আজকাল | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মগজ খেকো জীবাণু। চুপিসারে কুরে কুরে খাচ্ছে মানুষের মগজ! দিন কয়েক আগেই, চীনে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার তথ্য সামনে এসেছিল। এবার একেবারে এ দেশে। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, কেরলে অতি সম্প্রতি ভয় বাড়াচ্ছে নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নামে পরিচিত একটি মুক্ত-জীবিত অণুজীব। তথ্য, ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত, সে রাজ্যে প্রাণঘাতী অ্যামিবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিসের ৪২ টি নিশ্চিত ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রের প্রতিবেদন অনুসারে। তালিকায়, আগস্টের শেষ দিকে কোঝিকোড়ে তিন মাস বয়সী একটি শিশু এবং ৫২ বছর বয়সী এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনা। 

    এই পরিস্থিতিতে সাধারণ বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে কেরল সরকার। পরিস্থিতি বিচারে 'জলি জীবন' নামের একটি কর্মসূচিও শুরু করেছে সে রাজ্যের সরকার। ওই কর্মসূচির মূল বার্তা হল, নলকূপ, জলের ট্যাঙ্ক এবং জনসাধারণের স্নানের জায়গাগুলিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, নেগেলেরিয়া ফাউলেরি অ্যামিবা দ্বারা সৃষ্ট। তথ্য, নেগেলেরিয়া ফাউলেরি হল একটি তাপ-প্রেমী প্রোটোজোয়ান যার উৎস উষ্ণ, মিঠে জল। যেমন-পুকুর, হ্রদ, নলকূপ, নদী এবং কম ক্লোরিনযুক্ত পুকুরের জল। বিশেষ করে গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে বাড়ে এর প্রকোপ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অ্যামিবা নাকের পথ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে, এবং দ্রুত মস্তিষ্কে ভ্রমণ করে, যার ফলে প্রাথমিক অ্যামিবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিস (PAM) হয়।

    এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহার ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত। ২০২৪ সাল থেকে কেরলে এই রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই সে রাজ্যে ৩৬টি সংক্রমণের ঘটনা এবং ন' জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।  তথ্য, ১৯৭০ সাল থেকে PAM-এর সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছে ভারতের। ১৯৭১ সালে, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র এবং অন্যান্য রাজ্যে প্রথম এই সংক্রমণ সামনে আসে। 

    অতি সম্প্রতি চীনে এই সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত সামনে আসে। ২২ আগস্ট দক্ষিণ চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের এক মহিলা সামাজিক মাধ্যমে জানান, তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যু হয়েছে প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিঙ্গোএনসেফালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে। মেয়ে আইসিইউতে টানা ৫০ দিনেরও বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায়। তিনি জানান, জুন মাসে মেয়ে সাঁতার কাটতে গিয়েছিল এবং দু’বার গরম জলের ঝরনাতেও গিয়েছিল। ২২ জুন থেকে তার মাথাব্যথা, হালকা জ্বর ও বমি শুরু হয়। ২৭ জুন তাকে এই রোগে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়।

    এর আগে ১১ আগস্ট আনহুই প্রদেশের আরেক মহিলা জানান, তার ছয় বছরের ছেলে একই সংক্রমণে মারা গেছে। মনে করা হচ্ছে, জুনের মাঝামাঝি সময়ে কিন্ডারগার্টেনে জলের সঙ্গে খেলার সময় অথবা এপ্রিল মাসে নদীর পাড়ে মাছ ধরার সময় সে সংক্রমিত হয়েছিল।

    চিনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের জাতীয় পরজীবীবিদ্যা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ড. লু ইয়ান জানান, এই রোগ সৃষ্টি হয় তথাকথিত “ব্রেইন-ইটিং” অ্যামিবা দ্বারা। এগুলো এককোষী জীব, যেগুলো গরম জলে যেমন লেক, নদী ও উষ্ণ প্রস্রবণ—তেমনি মাটি ও কাদাতেও বেঁচে থাকে।

    মানুষ যখন মিঠে জল, অপরিশোধিত সুইমিংপুল বা উষ্ণ প্রস্রবণে সাঁতার কাটে, ডুব দেয় বা খেলে তখন এগুলো নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এরপর এগুলো মস্তিষ্কে পৌঁছে টিস্যু নষ্ট করে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ত্বকের ক্ষত, জ্বর, মাথাব্যথা ও বমি।

     
  • Link to this news (আজকাল)