• প্রবল বন্যায় বিধ্বস্ত পাঞ্জাব! জলের তলায় হাজারের বেশি গ্রাম, মৃত ২৯ 
    আজকাল | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  •  

    আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাঞ্জাব ভয়াবহ বন্যার কবলে।  প্রাণহানি ২৯, বিপর্যস্ত লক্ষাধিক মানুষ। খবর অনুযায়ী, পাঞ্জাব সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। টানা ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এখনও পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের প্রায় ১২টি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫,৬০০-রও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছেন, হাজার হাজার একর ফসল নষ্ট হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি, অবকাঠামো ও গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে।

    পাঞ্জাবের রাজস্ব, পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী স. হরদীপ সিং মুণ্ডিয়ান জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১,০৪৪টি গ্রামে প্রায় ২.৫৬ লক্ষ মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। খবর মারফত, গুরদাসপুর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে প্রায় ১.৪৫ লক্ষ মানুষ এই দুর্যোগে আক্রান্ত। অন্যান্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে রয়েছে অমৃতসর, ফিরোজপুর ও ফাজিলকা।

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৫,৬৮৮ জনকে। এর মধ্যে গুরদাসপুর জেলা থেকে সর্বাধিক ৫,৫৪৯ জনকে, ফিরোজপুর থেকে ৩,৩২১ জন, ফাজিলকা থেকে ২,০৪৯ জন, অমৃতসর থেকে ১,৭০০ জন, পাঠানকোট থেকে ১,১৩৯ জন এবং হোশিয়ারপুর থেকে ১,০৫২ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১২৯টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বর্তমানে ৭,১৪৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ফিরোজপুর জেলাতেই সর্বাধিক মানুষ এই শিবিরগুলোতে অবস্থান করছেন।

    প্রবল দুর্যোগে উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)। তারা ইতিমধ্যেই ২০টি দল মোতায়েন করেছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ১০টি কলাম ইঞ্জিনিয়ার ইউনিটসহ মোতায়েন রয়েছে। উদ্ধারকাজে ৩৫টিরও বেশি হেলিকপ্টার এবং ১১৪টি নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সীমান্তরক্ষা বাহিনী (BSF)-ও সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে।

    প্রসঙ্গত চলতি বছর ১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। পাঠানকোটে সবচেয়ে বেশি ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অমৃতসর, বারনালা, হোশিয়ারপুর, লুধিয়ানা ও মানসা জেলায় তিনজন করে, এবং বাথিন্ডা, গুরদাসপুর, পাতিয়ালা, রূপনগর, এসএএস নগর ও সাঙ্গরুর জেলা থেকেও মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

    খবর মারফত জানা গিয়েছে, পাঠানকোটে এখনও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাজ্যের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৯৪,০০০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অমৃতসর, মানসা, কাপুরথালা, তরনতারন ও ফিরোজপুর জেলাগুলোতে ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

    ঘটনার প্রেক্ষিতে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বন্যাকবলিত মিয়ানি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি একটি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। মন্ত্রী মুণ্ডিয়ান জানিয়েছেন, বর্তমানে মেডিক্যাল দল কাজ করছে এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। জল সরে গেলে ক্ষতির পূর্ণমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সরকার শুধু তাৎক্ষণিক ত্রাণ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।
  • Link to this news (আজকাল)