‘এই ক্ষতি ভোলার নয়, আমরা ঘুরে দাঁড়াবই’, বেঙ্গালুরুতে থেকেও পাঞ্জাবে মন পড়ে রয়েছে গিলের, সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলেন আবেগঘন বার্তা
আজকাল | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাঞ্জাবের বন্যা নিয়ে এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগঘন বার্তা দিলেন ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক শুভমান গিল। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন বার্তা শেয়ার করেছেন তিনি। সেখানে তিনি পাঞ্জাবের ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা’-র ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গিল পাঞ্জাবের ভূমিপুত্র, তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের শক্তি যোগাতে তাঁর সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এক পোস্টে গিল লিখেছেন, ‘দেখে খুবই খারাপ লাগছে যে আমার পাঞ্জাব বন্যায় বিধ্বস্ত। পাঞ্জাব সব প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে শক্তিশালী থাকবে এবং আমরা আবারও উঠব। আমার প্রার্থনা সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে। আমার মানুষদের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ালাম।’ পাঞ্জাবে এই ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ বন্যার তাণ্ডব থেকে রক্ষার জন্য স্থানান্তরিত হয়েছেন। ভারী বর্ষণ এবং বাঁধের জল ছাড়ার ফলে পাঞ্জাবের ১০টিরও বেশি জেলা প্লাবিত হয়েছে।
সুতলজ, বীস এবং রবি নদীসহ বিভিন্ন ঋতুমুখী খাল ও নালা উজাড় হয়ে গেছে, কিছু স্থানে রবি নদীর জল স্বাভাবিক প্রস্থের দশ গুণে বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে এবং ফসলের বিশাল ক্ষেত ভেসে গেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঞ্জাবে ১,৩০০-এর বেশি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে এবং ৬,৫৮২ জনকে ১২২টি ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিশেষ করে পাঠানকোট, গুরুদাসপুর, ফাজিলকা, কাপুরথলা, তারনতারণ, ফেরোজপুর, হোশিয়ারপুর ও অমৃতসরে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। গিলের দিলজিৎ দোসাঞ্জ, অম্মি ভার্ক ও সোনম বাজওয়াওয়ের মতো পাশাপাশি একাধিক পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র তারকা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে দিলজিৎ দোসাঞ্জ এনজিও ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়ে গুরুদাসপুর এবং অমৃতসর জেলার দশটি গ্রামকে দত্তক নিয়ে খাবার, জল ও চিকিৎসা সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন। টানা ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এখনও পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজ্যের প্রায় ১২টি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫,৬০০-রও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছেন, হাজার হাজার একর ফসল নষ্ট হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি, অবকাঠামো ও গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। পাঞ্জাবের রাজস্ব, পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী স. হরদীপ সিং মুণ্ডিয়ান জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১,০৪৪টি গ্রামে প্রায় ২.৫৬ লক্ষ মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। খবর মারফত, গুরদাসপুর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে প্রায় ১.৪৫ লক্ষ মানুষ এই দুর্যোগে আক্রান্ত। অন্যান্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে রয়েছে অমৃতসর, ফিরোজপুর ও ফাজিলকা। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৫,৬৮৮ জনকে। এর মধ্যে গুরদাসপুর জেলা থেকে সর্বাধিক ৫,৫৪৯ জনকে, ফিরোজপুর থেকে ৩,৩২১ জন, ফাজিলকা থেকে ২,০৪৯ জন, অমৃতসর থেকে ১,৭০০ জন, পাঠানকোট থেকে ১,১৩৯ জন এবং হোশিয়ারপুর থেকে ১,০৫২ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১২৯টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বর্তমানে ৭,১৪৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ফিরোজপুর জেলাতেই সর্বাধিক মানুষ এই শিবিরগুলোতে অবস্থান করছেন।
প্রবল দুর্যোগে উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)। তারা ইতিমধ্যেই ২০টি দল মোতায়েন করেছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ১০টি কলাম ইঞ্জিনিয়ার ইউনিটসহ মোতায়েন রয়েছে। উদ্ধারকাজে ৩৫টিরও বেশি হেলিকপ্টার এবং ১১৪টি নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সীমান্তরক্ষা বাহিনী (BSF)-ও সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে। শুভমান গিল বর্তমানে বেঙ্গালুরুর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী এশিয়া কাপে সূর্যকুমার যাদব নেতৃত্বাধীন দলের সহ-অধিনায়কের ভূমিকা পালন করবেন তিনি। ২৫ বছর বয়সী গিল ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে অভিষেক শর্মার সঙ্গে ওপেনিং করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর নেতৃত্বে ভারত সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফি-তে ২-২ ড্র করেছে। গিল পাঁচ ম্যাচে ৭৫৪ রান করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে চারটি শতরান। যদিও তিনি সম্প্রতি দলীপ ট্রফির কোয়ার্টার-ফাইনালে অসুস্থতার কারণে খেলতে পারেননি। তবে এশিয়া কাপের আগে ফিটনেস পরীক্ষায় সফলভাবে পাশ করেছেন তিনি।