কেন ভারতকে ছেড়ে পাকিস্তান-প্রীতি ট্রাম্পের? হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন প্রাক্তন মার্কিন শীর্ষ কর্তা...
আজকাল | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মোদি-ট্রাম্প বন্ধুত্ব ছিল বিশ্বের অন্যতম চর্চার বিষয়। কিন্তু, মার্কিন শুল্ক-বোমার জেরে সেই ঘনিষ্ঠতা এখন তলানীতে। ট্রাম্পের কাছাকাছি এসেছে পাকিস্তান। কেন 'বন্ধু'-র এই ধরণের আচরণ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান জানিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানে তাঁর পরিবারের ব্যবসায়িক লাভের জন্য ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের ক্ষতি করেছেন। সুলিভান বলেছেন যে, ট্রাম্পের পদক্ষেপ "মার্কিন বিদেশ নীতির সবচেয়ে উপেক্ষিত অংশগুলির মধ্যে একটি।"
মেইডাসটাচ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে সুলিভান ব্যাখ্যা করেছেন যে, কয়েক দশক ধরে, রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক উভয় সরকারই বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং প্রযুক্তি, প্রতিভা, বাণিজ্য এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করত ভারতকে। ফলে দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটন একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।
সুলিভান আরও দাবি, "যেহেতু এখন পাকিস্তান, ট্রাম্প পরিবারিক ব্যবসাকে বাড়াতে নানা সুযোগ-সুবিদা দেওয়ার পক্ষে বলে জানিয়েছে। ফলে ট্রাম্প ভারতকে একপাশে ঠেলে দিয়েছেন। এটা একটা বিশাল কৌশলগত ক্ষতি কারণ, আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের জন্য একটি শক্তিশালী ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
সুলিভান সতর্ক করে বলেন যে, "ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কেবল ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষতিই করেনি, বরং আমেরিকার বিশ্বব্যাপী সুনামকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, জার্মানি, জাপান এবং কানাডার মতো দেশগুলি এখন এই পরিস্থিতি বিচার করে ভাবছে, যদি ভারতের সঙ্গে এটি ঘটতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গেও একই জিনিস ঘটতে পারে।"
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই মানসিকতা অন্যান্য দেশগুলিকে "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার" জন্য চাপ দিচ্ছে, যার অর্থ তারা ওয়াশিংটনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখার পরিবর্তে বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করছে।
সুলিভানের মতে, এটি আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের জন্য বিপজ্জনক। তাঁর কথায়, "আমাদের বন্ধুরা যাতে আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারে সেটা দেখতে হবে। এই আস্থাই আমেরিকার অন্যতম শক্তি। ভারতের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক যেভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, তা কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের ক্ষতি করছে না বরং বিশ্বজুড়ে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোটেকেও ধাক্কা দিচ্ছে।।"
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভারতের রাশিয়ান তেল ক্রয়ের কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে। তবে, জেফরিস এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, চার দিনের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় মধ্যস্থতা করার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যা দাবি ভারত প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করায় আসল কারণটি ভিন্ন ছিল, যা মার্কিন প্রেশিডেন্টকে ক্ষুব্ধ করেছিল।
পাকিস্তানের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কইসলামাবাদ কেবল নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনীত করেনি, বরং তাঁর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও তাদের নতুন চালু হওয়া পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিল (পিসিসি) -এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
পহেলগাঁও হামলার মাত্র কয়েকদিন পরে, ট্রাম্পের পরিবার-সমর্থিত সংস্থা, ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল (ডব্লিউএলএফ) পিসিসির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এনএসএ জ্যাক সুলিভান-সহ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই কারণেই ট্রাম্প নয়াদিল্লির চেয়ে ইসলামাবাদের দিকে ঝুঁকেছেন।
ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও, পাকিস্তানের উপর মাত্র ১৯ শতাংশ কর চাপানো হয়েছে।
২৬ এপ্রিল চালু হওয়া পিসিসির লক্ষ্য, পাকিস্তানকে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিপ্টো হাব হিসেবে গড়ে তোলা। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিকেন্দ্রীভূত অর্থ প্ল্যাটফর্ম - ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল-এর সঙ্গে চুক্তি। ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল-এর ৬০ শতাংশ মালিকানা ডিটি মার্কস ডিইএইআই এলএলসি-এর, যা ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্প এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এবং তাঁর জামাই জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থা।
ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল-এর ওয়েবসাইটে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ওই সংস্থার চিফ ক্রিপটো অ্যাডভোকেট বলা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটি ব্লকচেইন উদ্ভাবন এবং স্টেবলকয়েন গ্রহণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক স্বার্থকে আরও দৃঢ় করে তোলে।