দাগি প্রার্থীদের মামলা খারিজ, এত দিন কোথায় ছিলেন? প্রশ্ন হাইকোর্টের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় নতুন মোড়। কলকাতা হাইকোর্ট মঙ্গলবার কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করল ‘দাগি অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের। সেই সঙ্গে তাঁদের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দেয় আদালত। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এসএসসি কর্তৃক প্রকাশিত ‘দাগি অযোগ্য’ প্রার্থীদের তালিকায় আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। ফলে আগামী ৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে পারবেন না ওই প্রার্থীরা।
সম্প্রতি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এসএসসি ‘দাগি অযোগ্য’ প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করে, যাতে ১৮০৬ জনের নাম রয়েছে। তালিকা প্রকাশের পরই একাধিক প্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। মামলাকারীরা দাবি করেন, যে তাঁরা ‘দাগি’ নন এবং তাঁদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হোক। মামলাকারীদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, কে তাঁদের ‘দাগি’ ঘোষণা করল? কিসের ভিত্তিতে তাঁদের অযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হল? এমনকি দাবি করা হয়, যেহেতু তাঁদের পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল, তাই তাঁদের অযোগ্য বলা যুক্তিসঙ্গত নয়।
এই যুক্তিকে একেবারে খারিজ করে দেন বিচারপতি ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, ‘এত দিন কোথায় ছিলেন? তালিকা প্রকাশের পরই কেন আদালতে এলেন?’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, মামলাকারীরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাননি কেন, আর যদি না গিয়ে থাকেন, তবে আগেই আদালতের দ্বারস্থ হননি কেন?
মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ি এবং শাক্য সেন আদালতে সওয়াল করেন যে, তাঁদের মক্কেলরা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্ধারিত তিনটি ‘দাগি’ শ্রেণিতে (সাদা খাতা জমা, প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগ, মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে নিয়োগ) পড়েন না। তাঁদের বক্তব্য, যাঁরা সামান্য হলেও উত্তর লিখেছেন, তাঁদের ‘সাদা খাতা’ বলা যায় না। তাই তাঁদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া উচিত।
এসএসসি-র পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া সওয়াল করেন। তিনি জানান, মামলাকারীরা সকলেই ওএমআর শিট কারচুপির মাধ্যমে র্যাঙ্ক জাম্প করে অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছিলেন। সিবিআইয়ের তদন্তে উদ্ধার হওয়া তালিকার ভিত্তিতে এই নামগুলো এসএসসি চিহ্নিত করে। সেই অনুযায়ী প্রার্থীরা ‘দাগি অযোগ্য’ হিসেবে বিবেচিত।
বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে যদি স্কুলে না যান, তবে এখন কেন মামলা করলেন?’ তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে না যাওয়ার ব্যাখ্যা কী? কেন তখন এসএসসির কাছে যাননি?’ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এটি এমন একটি মামলা নয় যেখানে এসএসসির তালিকায় হস্তক্ষেপ করা যায়।
অন্যদিকে, মামলাকারীদের আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন, ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি কেন? তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের মক্কেলদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল, তারপর বাতিল করা হয়, যা যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে আদালত জানিয়ে দেয়, প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর বা অ্যাডমিট কার্ড থাকাই যথেষ্ট নয়। ওএমআর শিট কারচুপির প্রমাণ এবং সিবিআইয়ের রিপোর্টের ভিত্তিতেই তাঁরা ‘দাগি অযোগ্য’ হিসেবে বিবেচিত। সেই প্রেক্ষিতে তাঁদের পরীক্ষায় বসার অধিকার নেই।
ফলে, এসএসসি-র পরবর্তী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আশা কার্যত শেষ হয়ে গেল ‘দাগি’ প্রার্থীদের জন্য। হাইকোর্টের এদিনের রায় স্পষ্ট করে দিল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিচারব্যবস্থা কোনও ছাড় দেবে না।