• হেয়ার স্কুলের উদ্যোগে পালিত হল ডেভিড হেয়ারের ২৫০-তম জন্মবার্ষিকী
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী

    ঘড়ির ব্যবসা করতে ভারতে এসেছিলেন মহামতি ডেভিড হেয়ার। কিন্তু এখানে এসে তিনি ঘড়ির ব্যবসা ছেড়ে দেশের শিক্ষার উন্নতি কল্পে ব্রতী হন। ভারতের সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার আলো পোঁছনোর জন্য যাঁরা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি ধীরে ধীরে তাঁদের একজন হয়ে ওঠেন। তাঁর উদ্যোগেই ১৮১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৈরি হয় হেয়ার স্কুল। সোমবার হেয়ার স্কুলের ২০৮ তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালন হয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও হলে। এদিনের উপলক্ষ কেবল প্রতিষ্ঠা দিবস পালন ছিল না। পালিত হয়েছে ডেভিড হেয়ারের ২৫০তম জন্মবার্ষিকী। না, এই মহান ব্যক্তিত্বের প্রকৃত জন্মদিবস জানা যায়নি। তাই কর্মই মানুষের প্রকৃত পরিচয়, এই কথা অনুযায়ী ডেভিড হেয়ারের প্রতিষ্ঠিত হেয়ার স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসকেই তাঁর জন্মদিবস হিসেবে পালন করা হয়।

    সোমবার হেয়ার স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ডেভিড হেয়ারের মূর্তিতে মাল্যদান করে অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাজ্য সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা হেয়ার স্কুলের ল্যাবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ডিরোজিও হলে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের সচিব প্রিয়দর্শিনী মল্লিক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সোমনাথ ভট্টাচার্য, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তপন কুমার মাইতি এবং আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ। প্রত্যেকেই শিক্ষা জগতে ডেভিড হেয়ারের অবদান এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের যে কৃতিত্ব তা নিয়ে নিজ নিজ বক্তব্য রাখেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সোমনাথ ভট্টাচার্য জানান, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে হেয়ার স্কুলের যে অবদান তা আজকের দিনে খুবই প্রাসঙ্গিক। বর্তমানের সামাজিক ও রাজনৈতিক যা অবস্থা এবং বিভিন্ন স্কুল যেসব প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে থেকে যদি একজন ছাত্রও ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে তাহলে তা খনিগর্ভ থেকে হিরে তুলে আনার সমান। সেই দিক থেকে হেয়ার স্কুল যে শ্রম, নিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষাযজ্ঞে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছে তা আজকের দিনে খুবই জরুরি।’

    হেয়ার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তপন কুমার মাইতি জানান, ‘বাংলার মনীষা, মেধা এবং প্রজ্ঞা ও মহান ব্যক্তিত্বদের যে আত্মত্যাগ, তার পরম্পরা অর্থাৎ ধারাবাহিকতা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। বাংলার ছাত্র ছাত্রীদের কাছে আধুনিক শিক্ষার আলো পৌঁছনোর জন্য হেয়ার সাহেব ২০৮ বছর আগে এই স্কুল তৈরি করেছিলেন। সেই সময় তাঁর মতই এই শিক্ষাযজ্ঞে আত্মত্যাগ করেছিলেন বেথুন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বেথুন সাহেব, হিন্দু কলেজের অধ্যাপক ডিরোজিও সাহেব, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং আরও অনেকে। সম্মিলিত ভাবে এই চারটে স্কুল স্মৃতিতর্পণের তীর্থক্ষেত্র তৈরি করতে চলেছে। তাঁদের যে সামাজিক দায়বদ্ধতা তার দায়ভার আমরা আধুনিক প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি যাতে তারা মানবকল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)